আয়ারল্যান্ডকে বিদায় করে সুপার টুয়েলভে নামিবিয়া

অভিজ্ঞতা কিংবা শক্তি-সামর্থ্য, সব বিবেচনাতেই বেশ এগিয়ে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে দাপট দেখাল কাগজে-কলমে পিছিয়ে থাকা নামিবিয়া। বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানরা নিখুঁত পারফরম্যান্সে লিখল নতুন ইতিহাস। প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে এসেই দলটি জায়গা করে নিল মূল পর্বে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2021, 01:32 PM
Updated : 22 Oct 2021, 06:57 PM

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নামিবিয়ার অসাধারণ জয়টি ৮ উইকেটে। প্রতিপক্ষের দেওয়া ১২৬ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ৯ বল আগেই। টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে এটা তাদের প্রথম জয়।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে আসর শুরুর পর নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার পথে চলা শুরু করে নামিবিয়া। আইরিশদের হারিয়ে সেটারই পূর্ণতা দিল তারা; শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জায়গা করে নিল সুপার টুয়েলভে। আর লঙ্কানদের বিপক্ষে পরাজয়ের পর এই ম্যাচেও হেরে পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন ভাঙল আয়ারল্যান্ডের।

নামিবিয়ার জয়ের পথে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাস। খেলেন ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। তবে বল হাতে ২২ রান দিয়ে দুই উইকেটের পর ব্যাট হাতে ১৪ বলে ২৮ রান করে ম্যাচ সেরা ডেভিড ভিসা। টানা দুই ম্যাচে এই স্বীকৃতি পেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে নামিবিয়ার হয়ে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করা এই অলরাউন্ডার।

ম্যাচের শুরুটা অবশ্য দারুণ করেছিল আয়ারল্যান্ড। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলটি পায় উড়ন্ত সূচনা। দুই ওপেনার পল স্টার্লিং ও কেভিন ও’ব্রায়েন দলকে গড়ে দেন শক্ত ভিত। পাওয়ার প্লেতে ৫৫ রান তুলে ফেলে দলটি।

তৃতীয় ওভারে জেজে স্মিটকে ছক্কায় ওড়ানো স্টার্লিং পরের ওভারে বের্নার্ড শুলজকে মারেন তিন চার। ইয়ান ফ্রাইলিঙ্ককে দুটি চার হাঁকান ও’ব্রায়েন।

জমে ওঠা ৬২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে স্টার্লিংয়ের বিদায়ে। শুলজের বলে ছক্কার চেষ্টায় তিনি ধরা পড়েন লং-অনে। ৫ চার ও এক ছক্কায় ২৪ বলে করেন ৩৮ রান।

পরের ওভারেই ফিরে যান ও’ব্রায়েন। স্কয়ার লেগ সীমানায় ২৫ রান করে ক্যাচ দেন ফ্রাইলিঙ্কয়ের বলে। এরপর আইরিশদের চেপে ধরে নামিবিয়া।

বাকি ব্যাটসম্যানরা যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। এর শুরু গ্যারেথ ডেলানিকে দিয়ে; ভিসার স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

অ্যান্ডি বালবার্নিও টানতে পারেননি দলকে। এক ওভারেই আইরিশ অধিনায়ক ও কার্টিস ক্যাম্পারকে ফিরিয়ে দেন ফ্রাইলিঙ্ক। ইনিংসের শেষ তিন ওভারে আরও তিন উইকেট হারানো দলটি শেষ ৩১ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট।

২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া ফ্রাইলিঙ্ক নামিবিয়ার সেরা বোলার।

রান তাড়ায় সাবধানী শুরু করা নামিবিয়া পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে হারায় প্রথম উইকেট। মিড-অনে ও’ব্রায়েনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরে যান ক্রেইগ উইলিয়ামস। এক উইকেটে ২৭ রান তুলে প্রথম ৬ ওভারে শেষ করে তারা।

লক্ষ্য খুব বড় নয়, সেটা মাথায় রেখেই এগোতে থাকেন তিনে নামা এরাসমাস। দেখেশুনে খেলতে থাকেন জেন গ্রিনও। ৪৯ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়েন দুজন।

রানের গতি বাড়াতে গিয়ে ফিরে যান গ্রিন। এবার মিড অফে দারুণ ক্যাচ হাতে জমান ও’ব্রায়েন। নামিবিয়ার দুই ব্যাটসম্যানকেই ফেরান ক্যাম্পার।

এরাসমাস ঠাণ্ডা মাথায় খেলতে থাকেন। রান বাড়াতে থাকেন প্রান্ত বদল করে, সুযোগ পেলেই তুলে নেন বাউন্ডারি।

ক্রিজে গিয়ে আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন ভিসা। টানা দুই বলে ক্রেইগ ইয়াংকে ছক্কায় উড়িয়ে প্রয়োজনীয় রান কমিয়ে আনেন।

দারুণ এক শটে বোলার সিমি সিংয়ের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন এরাসমাস। পরে ইয়াংকে চার মেরে ৪৮ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। দুই বছর আগে কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আইরিশদের বিপক্ষে তার ফিফটির পরও হেরেছিল দল। এবার ফিফটি করে তিনি হাসালেন পুরো দলকে।

ওই ওভারেই চার মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ভিসা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আয়ারল্যান্ড: ২০ ওভারে ১২৫/৮ (স্টার্লিং ৩৮, ও’বায়েন ২৫, বালবার্নি ২১, ডেলানি ৯, ক্যাম্পার ৪, টেক্টর ৮, রক ৫, অ্যাডায়ার ৫, সিমি ৫*, ইয়াং ১*; ট্রাম্পেলমান ৪-০-১৮-০, ভিসা ৪-০-২২-২, স্মিট ৪-০-২৭-১, শুলজ ৩-০-২৫-১, ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-২১-৩, ফ্রান্স ২-০-১১-০)

নামিবিয়া: ১৮.৩ ওভারে ১২৬/২ (উইলিয়ামস ১৫, গ্রিন ২৪, এরাসমাস ৫৩*, ভিসা ২৮*; লিটল ৪-০-২২-০, ইয়াং ৩.৩-০-৩৩-০, অ্যাডায়ার ১.৪-০-১২-০, ক্যাম্পার ৩-০-১৪-২, ও’ব্রায়েন ২.২-০-১৫-০, সিমি ৪-০-২৮-০)

ফল: নামাবিয়া ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড ভিসা