প্রথম রাউন্ডে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনিকে ৮৪ রানে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে তো বটেই, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটি।
ওমান ক্রিকেট একাডেমি মাঠে বৃহস্পতিবার টস জয়ী বাংলাদেশ ২০ ওভারে তোলে ১৮১ রান। বিশ্বকাপে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। পিএনজি করতে পারে কেবল ৯৭ রান।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের আগের সেরা জয় ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭১ রানে, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় জয় ছিল ওমানের বিপক্ষে ৫৪ রানে।
ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এই জয়ের ভিত গড়েন মাহমুদউল্লাহ। দল যখন প্রত্যাশিত দ্রুততায় রান করতে ভুগছিল, ক্যারিয়ারের দ্রুততম ফিফটিতে তখন ইনিংসের গতিপথ বদলে দেন অধিনায়ক। শেষ দিকে কার্যকর ইনিংস খেলেন আফিফ হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
সঙ্গে সাকিব আল হাসান তো আছেনই। বাংলাদেশের জয়ে তার অবদান না থেকে কী আর পারে! প্রথম ওভারে উইকেটে গিয়ে ৪৬ রানের ইনিংসের পর বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রানে তার শিকার ৪ উইকেট। আগের ম্যাচের মতো তিনিই ম্যাচ সেরা।
দুর্দান্ত এই জয়ে বড় স্বস্তি নিঃসন্দেহে ব্যাটিংয়ে বড় রান পাওয়া। ইনিংসের দুই ভাগের চেহারা যদিও ছিল দুইরকম। প্রথম ১০ ওভারে রান আসে ৭১, পরের ১০ ওভারে ১১০।
পাওয়ার প্লে খুব খারাপ কাটেনি। আগের ম্যাচে ফিফটি করা মোহাম্মদ নাঈম শেখ যদিও ফেরেন এবার প্রথম ওভারেই। ম্যাচের প্রথম বলে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়ে পরের বলেই লেগ স্টাম্পে হাফভলি বলে ক্যাচ তুলে দেন স্কয়ার লেগের হাতে।
প্রথম দুই ওভারে কেবল ৬ রান এলেও পরের দুই ওভারে ছক্কা মারেন লিটন দাস ও সাকিব। পাওয়ার প্লেতে রান আসে ৪৫। সবশেষ ১৩ টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান এটি।
লিটনকে দেখে মনে হচ্ছিল, বড় ইনিংস অবশেষে পেতে যাচ্ছেন তিনি। শুরু থেকেই বেশ স্বচ্ছন্দ ছিলেন, শট নির্বাচনেও ছিলেন সতর্ক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি থিতু হয়েও (২৩ বলে ২৯)। পিএনজি অধিনায়ক আসাদ ভালার বলে আউট হন স্লগ সুইপ করে। দারুণ ক্যাচ নেন সেসে বাউ।
দলের রানের গতি ওই সময়টায় একটু কমে যায়। প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতায় ভুগতে থাকেন সাকিব। মাথায় পানি ঢেলে, ইনিংসের মাঝ বিরতিতে ছাতার নিচে চেয়ারে বসে শ্রান্তি কমানোর চেষ্টা করেন তিনি।
এর মধ্যেই মুশফিকুর রহিম ফিরে যান বাঁহাতি স্পিনার সাইমন আটাইয়ের আলগা এক বলে। আরেকটু দীর্ঘায়িত হলো তার দুঃসময়। এই সংস্করণে ফিফটি নেই তার ২৭ ইনিংস ধরে।
মাহমুদউল্লাহ নামতেই অবশ্য বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। উইকেটে যাওয়ার পরপরই দুর্দান্ত এক ছক্কায় তিনি বার্তা দিয়ে দেন, ঝড় আসছে।
সাকিবের রান এক পর্যায়ে ছিল ২৩ বলে ২২। এই গরমে খুব বেশি না দৌড়ে বড় শটে রান বাড়ানোর পথ বেছে নেন তিনি। দুটি ছক্কা মারেন তিনি আসাদ ভালাকে। আউট হয়ে যান অবশ্য ভালার বলেই। ওয়াইড বলে ছক্কার চেষ্টায় লং অনে ধরা পড়েন চার্লস আমিনির অসাধারণ ক্যাচে। ৩৭ বলে তার ৪৬ রানের ইনিংসে ছক্কা ৩টি, চার নেই।
সেখান থেকে ইনিংসের লাগাম ধরেন মাহমুদউল্লাহ। পেশি শক্তি আর স্মার্ট শটের মিশেলে টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিফটি স্পর্শ করেন ২৭ বলে।
ছয়ে নেমে চারটি চারে আফিফ করেন ১৪ বলে ২১। শেষটায় তবু ১৭০ ছুঁতে পারছিল না দল। তিন বলেই সেই আক্ষেপ মিটিয়ে দেন সাইফ। টানা দুটি ছক্কা ও এক চারে দলের রান নিয়ে যান রেকর্ড উচ্চতায়। শেষ ৫ ওভারে আসে ৬৮ রান।
সেই রান তাড়ার শক্তি পিএনজির ছিল না। চমকপ্রদ কিছু তারা করতেও পারেনি। বরং দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে তাদের ব্যাটিং ধসিয়ে দেয় বাংলাদেশ।
সাইফ ধরে রাখেন ভালো বোলিংয়ের ধারা। আগের দুই ম্যাচের হতাশা ভুলিয়ে তাসকিন আহমেদ করেন দারুণ বোলিং। সাকিবের বোলিংয়ের তো কোনো জবাবই ছিল পিএনজির। উইকেটের পেছনে চোখধাঁধানো এক ক্যাচ নেন নুরুল হাসান সোহান, সীমানায় নেন নাঈম।
২৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে এক পর্যায়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায় পিএনজি। তবে পরে কিপলিন ডোরিগার ৩৪ বলে ৪৬ রানের ইনিংস আর বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিংয়ের ক্লান্তি মিলিয়ে তারা যেতে পারে একশর কাছাকাছি। বাংলাদেশের রেকর্ড জয় তবু থামাতে পারেনি তারা। মূল লড়াইয়ের আগে যে জয় হতে পারে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নাকি রানার্সআপ হয়ে মূল লড়াইয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, সেটি জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে দিনের পরের ম্যাচ পর্যন্ত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮১/৭ (নাঈম ০, লিটন ২৯, সাকিব ৪৬, মুশফিক ৫, মাহমুদউল্লাহ ৫০, আফিফ ২১, সোহান ০, সাইফ ১৯*, মেহেদি ২*; মোরেয়া ৪-০-২৬-২, রাভু ৪-০-৪০-২, সোপার ৪-০-৫৩-০, বাউ ২-০-২০-০, ভালা ৩-০-২৬-২, আমিনি ২-০-৯-০, আটাই ১-০-৬-১)।
পাপুয়া নিউ গিনি: ১৯.৩ ওভারে ৯৭ (সিয়াকা ৫, ভালা ৬, আমিনি ১, বাউ ৭, আটাই ০, হিরি ৮, ভানুয়া ০, ডোরিগা ৪৬*, সোপার ১১, মোরিয়া ৩, রাভু ৫; সাইফ ৪-০-২১-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৩০, তাসকিন ৩.৩-১-১২-২, সাকিব ৪-০-৯-৪, মেহেদি ৪-০-২০-১)।
ফল: বাংলাদেশ ৮৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।