প্রথমবারের মতো ২০ ওভারের বিশ্বকাপে খেলতে আসা নামিবিয়ার জয় ৬ উইকেটে। আবু ধাবিতে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে ১৬৫ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে যায় ৬ বল বাকি থাকতে।
টি-টোয়েন্টিতে দলটির সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় এটিই। আবু ধাবিতে এত রান তাড়া করে জয় নেই আর কোনো দলের। এই মাসের শুরুতে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিল নামিবিয়ার আগের রেকর্ড।
মাত্র ৪০ বলে ৫ ছক্কা ও ৪টি চারে অপরাজিত ৬৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা ভিসা।
ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, বিশ্বকাপে নামিবিয়ার প্রথম জয় এটিই। ওয়ানডে বিশ্বকাপে তারা খেলেছে একবারই, ২০০৩ সালের আসরে গ্রুপ পর্বে ছয় ম্যাচের সবগুলিতেই হেরেছিল।
এবারের টুর্নামেন্টে দুই দলই তাদের তাদের প্রথম ম্যাচে হেরেছিল ৭ উইকেটে। এই জয়ে সুপার টুয়েলভে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল নামিবিয়া। প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার দুয়ারে চলে গেল নেদারল্যান্ডস।
অথচ ম্যাচের প্রথম ভাগটা ডাচদের জন্য ছিল দারুণ। ম্যাক্স ও’ডাওডের টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে ৭০ রানের দারুণ ইনিংস তাদের এনে দেয় লড়াইয়ের পুঁজি। পরে ৫২ রানে প্রতিপক্ষের ৩ উইকেট নিয়ে বোলাররা জাগান আশা। সব ছাপিয়ে পার্থক্য গড়ে দেয় ভিসার বিধ্বংসী ইনিংসটি।
এরপরই দ্রুত ২ উইকেট হারায় তারা। ৮ রানে একবার জীবন পেয়ে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মাইবার্গ। ইয়ান ফ্রাইলিঙ্কের শর্ট বল আপার কাট খেলার চেষ্টায় ক্যাচ দেন তিনি পয়েন্টে (১৬ বলে ১৭)।
টেকেননি সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান রুলফ ফন ডার মেরওয়া। তাকেও শর্ট বলে ফেরান ভিসা।
প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭ বলে ৫১ রান করা ও’ডাওড দলকে এগিয়ে নেন কলিন আকারম্যানকে সঙ্গী করে। দুইবার রান আউট হতে হতে বেঁচে যাওয়া ও’ডাওড চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন ৪২ বলে। প্রথম ডাচ ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে ফিফটি করলেন তিনি।
৬২ বলে ৮২ রানের জুটি ভাঙে আকারম্যানের বিদায়ে। ৩২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় তিনি করেন ৩৫ রান। শেষ ওভারে রান আউটে কাটা পড়েন ও’ডাওড। ১১ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন স্কট এডওয়ার্ডস।
রান তাড়ায় নামিবিয়ার শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া। দুই ওপেনার স্টিভেন বার্ড ও জেন গ্রিন প্রথম চার ওভারে তোলেন ৩৩ রান। এরপর দ্রুত ৩ উইকেট হারায় তারা।
গ্রিনকে (১২ বলে ১৫) বোল্ড করে দেন পেসার ফ্রেড ক্লাসেন। আকারম্যানের অফ স্পিনে বোল্ড হন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা ক্রেইগ উইলিয়ামস। বার্ডকে (২০ বলে ১৯) বোল্ড করেন পিটার সিলার।
৫২ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাস ও ভিসা। দশম ওভারে দুজনই একটি করে ছক্কা মারেন ফন ডার মেরওয়াকে। আকারম্যানের পাঁচ বলের মধ্যে দুই ছক্কা ও একটি চার মারেন ভিসা।
দুজনের জুটির রান পঞ্চাশ স্পর্শ করে মাত্র ২৪ বলে। তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যায় নামিবিয়া। শেষ ৫ ওভারে নামিবিয়ার প্রয়োজন ছিল ৩৮ রান।
ষোড়শ ওভারে সিলারকে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে ভিসা ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ২৯ বলে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার প্রথম ফিফটি এটিই।
জয়সূচক রান তার ব্যাট থেকে এলেও ম্যাচের নায়ক ভিসা। কিছুদিন আগেও হয়তো ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবশেষ ম্যাচ খেলেন তিনি ২০১৬ সালে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
বাবার জন্মভূমি নামিবিয়ার হয়ে ভিসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অনুমতি পান গত অগাস্টে। নতুন পথচলার শুরুর দিকেই দেশটিকে তিনি এনে দিলেন স্মরণীয় এক জয়।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এর আগে একটিই টি-টোয়েন্টি খেলেছিল নামিবিয়া। ২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইয়ের ম্যাচটি তারা হেরেছিল ৪৪ রানে। এবার মাঠ ছাড়ল তারা বিজয়ীর বেশে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৬৪/৪ (ও’ডাওড ৭০, মাইবার্গ ১৭, ফন ডার মেরওয়া ৬, আকারম্যান ৩৫, এডওয়ার্ডস ২১*, ফন বিক ২*; শুলজ ৪-০-৩১-০, ভিসা ৪-০-৩২-১, ট্রাম্পেলমান ৪-০-৩২-০, ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-৩৬-২, স্মিট ৪-০-২৮-০)
নামিবিয়া: ১৯ ওভারে ১৬৬/৪ (বার্ড ১৯, গ্রিন ১৫, উইলিয়ামস ১১, এরাসমাস ৩২, ভিসা ৬৬*, স্মিট ৯*; ক্লাসেন ৪-০-১৪-১, আকারম্যান ৩-০-৩২-১, ফন বিক ৪-০-৩৯-০, গুগটেন ৩-০-৩২-১, ফন ডার মেরওয়া ২-০-২২-০, সিলার ২-১-৮-১, লেডে ১-০-১৫-১)
ফল: নামিবিয়া ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড ভিসা।