এটি ওমান ক্রিকেট একাডেমি স্টেডিয়াম। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পথচলা শুরু হবে যে ময়দানে। বিশ্বআসর উপলক্ষে অস্থায়ী কিছু স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে দর্শকদের জন্য। কিন্তু চাহিদা যেখানে আকাশছোঁয়া, জোগান সেখানে জমিনে।
মাঠের পাশেই দেখা তেমনই এক আগ্রহী দর্শকের সঙ্গে। ৩৫ বছর বয়সী এই প্রবাসী বাংলাদেশি পেশায় ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের যুগ্ম সম্পাদকও। খেদ মেশানো হাসিতে তিনি বলছিলেন, “মাঠে ঢুকতে পারবে মাত্র ৩ হাজার দর্শক, কিন্তু খেলা দেখতে চায় ধরুন তিন লাখ লোকে। বোঝেন অবস্থা! টিকেটের দাম অনেক, তারপরও অনেক চাহিদা।”
তিন লাখ দর্শকের কথা হয়তো তার বাড়তি উত্তেজনার প্রকাশ। তবে লোকের আগ্রহের ধারণা কিছুটা পাওয়া যায় এখান থেকে। মাসকাট শহরের রুইয়ি এলাকায় দুই প্রবাসী ব্যবসায়ী নুরুল হক নুরু ও মোহাম্মদ আব্বাসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বিশ্বকাপ ঘিরে একই রকমের রোমাঞ্চের কথা।
ওমানের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন (এনসিএসআই)-এর গত মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জনসংখ্যা ৪৫ লাখের একটু বেশি। সেখানে প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ। বিশাল সংখ্যক এই প্রবাসীর বড় একটা অংশ উপমহাদেশের।
এনসিএসআই-এর গত বছরের জুন মাসের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশিরা, প্রায় ৬ লাখ। বছর দুয়েক আগেও যা ছিল সাত লাখের ওপরে। ওই জরিপ অনুযায়ী, প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা এখানে ৫ লাখ ৮০ হাজারের ওপর, পাকিস্তানিদের সংখ্যা ২ লাখের মতো। উপমহাদেশের মানুষদের ক্রিকেট উন্মাদনা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার আছে সামান্যই।
ঝড়ের পর থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। শুক্রবার ছুটির দিনও প্রবাসীদের পাঁচটি সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গেছেন ত্রাণ ও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করতে। এই ধাক্কা সামাল দিতে আরও অনেক সময় লাগবে, বলছেন প্রবাসীরা।
সেই ক্ষত কিছুটা মুছতে দাওয়াই হয়ে এসেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ক্রিকেট মানচিত্রে অনেকটাই অপরিচিত ওমানে ২০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ হচ্ছে, সেখানে চোখের সামনে খেলতে দেখা যাবে প্রিয় মাতৃভূমির ক্রিকেটারদের, প্রবাসী বাংলাদেশিরা রোমাঞ্চে হাবডুবু খাচ্ছেন।
ওমানে বিশ্বকাপ হচ্ছে, এক সময়ের বাস্তবতা বিবেচনায় এটিই এক বিস্ময়। বছর দশেক আগেও ওমানে তেমন কোনো ক্রিকেট মাঠ ছিল না। এখন সেখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্টেডিয়াম আছে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেটির সুযোগ-সুবিধার মান আরও বাড়ানো হয়েছে। মূল স্টেডিয়ামের লাগোয়া মাঠ আছে আরেকটি, যেখানেও স্বীকৃত পর্যায়ের ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ওমানের ওয়ানডে দিয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে এই ক্রিকেট একাডেমি মাঠের আন্তর্জাতিক অভিষেক। এই ২১ মাসে এই মাঠে ৬২টি (২০ ওয়ানডে ও ৪২ টি-টোয়েন্টি) আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়ে গেছে। ওমানের ক্রিকেট ও এই মাঠের গ্রহণযোগ্যতাকেই তুলে ধরছে তা। ভারত থেকে বিশ্বকাপ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরে আসার পর তাই সহ-আয়োজক হিসেবে ওমানও পেয়ে গেছে বিশ্বকাপের গৌরব।
তবে যথারীতি সেই গৌরবে স্নান করছে মূলত প্রবাসী ও উপমহাদেশের বংশোদ্ভূতরাই। ওমান জাতীয় দল ভারতীয়-পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত দিয়েই গড়া মূলত। ক্রমশ ওমান ক্রিকেটের ভিত্তি হয়ে উঠতে থাকা স্কুল ক্রিকেট, অনূর্ধ্ব-১৩, ১৬ ও ১৯ পর্যায়েও তাদেরই প্রধান্য।
ওমানের ক্রিকেটে বাংলাদেশিদের সরাসরি সংযোগ সামান্যই। তবে এবার বিশ্বকাপ সুযোগ করে দিচ্ছে সম্পৃক্ততার। ওমানের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে পাওয়া তাদের আপাতত একঘেয়ে প্রবাস জীবনে বাড়তি রঙের ছটা। অপেক্ষা এখন কেবল মাঠের ক্রিকেটেও উপলক্ষ রঙিন হয়ে ওঠার।