কোভিড-১৯: উহানের প্রথম রোগীরা এখনও ভুগছেন

কোভিড-১৯ মহামারীর সূচনা হয়েছিল যেখান থেকে, সেই চীনের উহান শহরের প্রথম দিকের আক্রান্তরা এখনও নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2022, 04:55 AM
Updated : 13 May 2022, 04:55 AM

বৃহস্পতিবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, উহানে প্রথম করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর আক্রান্তদের যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, দুই বছর পার হওয়ার পরও ঘুম না হওয়া, অবসাদের মত নানা উপসর্গ তাদের ভোগাচ্ছে।

বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিনে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উহানে মহামারীর প্রথম ঢেউয়ে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তারা আজও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। যার অর্থ দাড়াচ্ছে, সাধারণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় তাদের স্বাস্থ্য দুর্বল ছিল এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে যথেষ্ট মনোযোগ তারা সে সময় পাননি।

এ গবেষণা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী সংকটগুলো সামনে এনেছে। কোভিড সংক্রমণের শিকার লাখ লাখ মানুষ - যাদের মধ্যে কিছু শিশু-কিশোরও রয়েছে। ভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পরেও দীর্ঘমেয়াদী নানা উপসর্গে তারা ভুগছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি থেকে শুরু করে কাজ করার সামর্থ্য কমে যাওয়ার মত সমস্যাও রয়েছে অনেকের।

বেইজিংয়ের চীন-জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চিকিৎসকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে, যখন চীন সরকার কোভিডের তৃতীয় ঢেউ রুখতে তাদের ‘জিরো কোভিড’ নীতি দ্বিগুণ কঠোর করেছে। অথচ বিশ্বের অন্যান্য স্থানে মাহামারীর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে।

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর রোগীরা যেসব উপসর্গে ভুগতে থাকেন, সেগুলোর কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কিছু জানতে পারেননি গবেষকরা। তবে চীন-জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের এই গবেষণা কোভিড আক্রান্তদের নিয়ে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী ফলোআপ।

তাছাড়া এই গবেষণা চিকিৎসকদের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রেও আরও তথ্য দিতে পারে, যেহেতু এখানে ওই রোগীরা করোনাভাইরাসের শুরুর ধরনটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এখনকার ধরনগুলোতে নয়।

গবেষকেরা ১ হাজার ১৯২ জন রোগীর ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন যারা ২০২০ সালের শুরুতে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে উহানের জিন ইন-তান হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। উপসর্গ দেখা যাওয়ার পর থেকে ছয় মাস, ১২ মাস ও দুই বছর পর তিন দফা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এই রোগীদের।

অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিলো ৫৭ বছর এবং তাদের অর্ধেক পুরুষ। তারা পরীক্ষাগারের বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেছেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, উপসর্গগুলো ও জীবনমান সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। গবেষণায় তাদের ছয় মিনিট ধরে হাঁটার সক্ষমতা পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিছু অংশগ্রহণকারীর ফুসফুস ও বুকের এক্সরে করা হয়েছে পরীক্ষার জন্য।

গবেষণার ফল থেকে দেখা গেছে, সময় সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সহায়তা করেছে। সংক্রমণের প্রথম ছয় মাস পর গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৬৮ শতাংশ কোভিডের অন্তত একটি দীর্ঘ মেয়াদী উপসর্গ দেখা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তবে দুই বছর পর এই হার ৫৫ শতাংশে নেমে গেছে।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, তারা বছরে অন্তত একবার এই অংশগ্রহণকারীদের ফলোআপ করার চেষ্টা করবেন।