নিউ ইয়র্কে হরিণের দেহে ওমিক্রন জাগাচ্ছে নতুন উদ্বেগ

নিউ ইয়র্কে সাদা লেজের হরিণের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনটি শনাক্ত হওয়ার পর নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে গবেষকদের মনে; চতুষ্পদ এই প্রাণী করোনাভাইরাসের নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের পোষক হয়ে উঠতে পারে কি না, সেই ভয় পাচ্ছেন তারা।

>>রয়টার্স
Published : 9 Feb 2022, 06:41 PM
Updated : 9 Feb 2022, 06:41 PM

পেনসিলভেইনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক নিউ ইয়র্কের স্টেটেন আইল্যান্ডের ১৩১টি হরিণের রক্ত এবং নাকের শ্লেষ্মার নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ শতাংশ হরিণের শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি পেয়েছেন। 

এর মানে হল, এসব প্রাণী আগেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল। আর করোনাভাইরাসের নতুন ধরন আবির্ভূত হলে সেগুলোও এসব হরিণকে সংক্রমিত করতে পারবে।

মানুষ ও পোষা প্রাণীর বাইরে বুনো পরিবেশে কোনো প্রণীর শরীরে এই প্রথম করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনটি শনাক্ত হল। আর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সাদা লেজের হরিণ আছে প্রায় তিন কোটি। সেটাই গবেষকদের উদ্বেগের বড় কারণ।   

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেইনিয়া অঙ্গরাজ্যের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুরেশ কুচিপুড়ি বলেন, “বন্যপ্রাণীর কোনো প্রজাতির মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার ঘটলে সেটা আবার মানুষের মধ্যে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, এর মধ্য দিয়ে ভাইরাসের নতুন ধরন তৈরি হওয়ার সুযোগ ঘটে।”

এই গবেষক বলেন, অন্য কোনো প্রাণীর দেহে যাওয়ার পর ভাইরাসের মধ্যে বড় ধরনের মিউটেশন ঘটলে সেটা টিকার সুরক্ষা এড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। সেক্ষেত্রে এখনকার কোনো টিকা আর ওই ভাইরাসকে ঠেকাতে পারবে না, অর্থাৎ টিকা তখন হালনাগাদ করতে হবে।

এমন এক সময় বুনো পরিবেশে প্রাণীদেহে ওমিক্রন পাওয়া গেল, যখন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এর আরেকটি ঢেউ ব্যাপক সংক্রমণ ঘটানোর পর থিতিয়ে আসতে শুরু করেছে।

অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ওমিক্রন ছড়ানোর কোনো ঘটনা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে কোভিড সংক্রমিত মানুষের আশপাশে থাকা অন্য প্রাণীর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বহু ঘটনা এর আগে দেখা গেছে। 

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, গত বছরের অগাস্টে ওহাইওতে একটি বুনো হরিণের শরীরে প্রথমবারের মত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর কোভিড পজিটিভ প্রাণীদের তালিকা বেড়েছে।

প্রাণঘাতী ডেল্টা ধরনের সংক্রমণের ঢেউ থিতিয়ে আসার পর গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হয় ওমিক্রনের দাপট। বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ধরন শনাক্তের এক মাস আগে হরিণগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

হরিণের আগে কুকুর, বিড়াল, বাঘ, সিংহ, তুষার চিতা, ওটারস, গরিলা এবং মিঙ্কের শরীরের করোনাভাইরাস শনাক্তের কথা জানিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে নতুন এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম খবর আসে। এরপর সেই ভাইরাস দ্রুত পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তে পৌঁছে যায়।

প্রাণঘাতী এ ভাইরাস কীভাবে মানুষের মধ্যে ছড়াল তা খুঁজতে গবেষণা ‍শুরু হয় তখন থেকেই।ওই সময় বলা হচ্ছিল উহানের একটি বণ্যপ্রাণীর বাজার থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে ছড়ায়, যদিও তা প্রমাণিত কিছু নয়।  

বিভিন্ন বন্যপ্রাণী করোনাভাইরাসের বাহক হতে পারে। তার মধ্যে বিশেষভাবে বাদুড়ের কথা বলা যায়। এই প্রাণী বিভিন্ন ধরনের করোনাভাইরাস ব্যাপক সংখ্যায় বহন করতে সক্ষম।

স্তন্যপায়ী এই প্রাণীরা বড় এলাকা নিয়ে একসঙ্গে থাকে; উড়ে উড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি। প্রতিটি মহাদেশেই এখন তাদের দেখা মেলে। এরা নিজেরা সহজে অসুস্থ না হলেও দূর-দূরান্তে সংক্রামক জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

সে সময় আরেকটি ধারণা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল বিজ্ঞানী মহলে। বলা হচ্ছিল, বাদুর থেকে ভাইরাসটি হয়ত ছড়িয়েছিল বনরুইয়ে, সেখান থেকে মিউটিশনে আরও বদলে গিয়ে সেটা মানুষে পৌঁছায়।

এসব ধারণা বৈজ্ঞানিক যুক্তিনির্ভর অনুমান, কোনোটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয়। আর মানুষ থেকে বন্যপ্রাণীর শরীরে ছড়ানো করোনাভাইরাস নতুন বিপদের জন্ম দেবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরও অজানা।

পুরনো খবর