স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৪৯ হাজারের কম নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে আরও ১৮ জনের।
এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময়, গত বছরের ২৮ জুলাই। সেদিন ১৬ হাজার ২৩০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, মহামারীর মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৭ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা ১৬ লাখের ঘরে পৌঁছায়। এরপর মাত্র ১৩ দিনে সেই তালিকায় যুক্ত হল আরও এক লাখ নাম।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
ডেল্টার সেই ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের মহামারী পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল গত বছরের শেষে। ডিসেম্বরে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ঘোরাফেরা করছিল ২০০ থেকে ৩০০ এর ঘরে। শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ২ শতাংশের নিচে।
কিন্তু বিশ্বে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার শুরুর পর জানুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশেরও আবার দ্রুত উঠতে থাকে সংক্রমণের গ্রাফ।
জানুয়ারির প্রথম দিনও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারশর নিচে, ৬ জানুয়ারি তা হাজার ছাড়ায়, ১৬ জানুয়ারি পেরিয়ে যায় ৫ হাজারের ঘর, এরপর মাত্র চারদিনে তা দ্বিগুণ হয়ে ২০ জানুয়ারি ১০ হাজারের ঘর পেরিয়ে যায়। তার পরের পাঁচ দিনে তা ১৬ হাজার পেরিয়ে গেল আবার।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন এক হাজার ৯৫ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৪ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা এক লাখ ২৮ হাজার ৭৮৭ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে।
আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬৭। গত ১৮ জানুয়ারি ছিল ৫০ হাজার ৮৪৫ জন। অর্থাৎ, মাত্র এক সপ্তাহে সক্রিয় রোগী বেড়েছে ১৫০ শতাংশের বেশি।
মহামারীর বছর গড়ানোর পর ডেল্টার দাপটে বাংলাদেশে দিনে রোগী শনাক্তের হার ৩২ শতাংশে উঠেছিল ২০২১ সালে। তবে এরপর সংক্রমণের হার কমতে কমতে ২ শনাক্তের নিচে নেমেছিল।
সেই হার আবার বাড়তে বাড়তে মঙ্গলবার ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ছয় মাসের সর্বোচ্চ।
শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল সর্বশেষ গত বছরের ২৪ জুলাই, সেদিন প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩২ দশমিক ৫৫টিতে কোভিড পজিটিভ আসে।
আর ২০২০ সালের ১২ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, যা এ মাহামারীকালের রেকর্ড।
মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১০ হাজার ৪৭৮ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৬৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
গত কয়েক মাস ধরেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর একটি বড় অংশ থাকে ঢাকার। তবে গত কয়েক দিন ধরে দেশের অন্যান্য জেলায়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
গত এক দিনে ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৯৪৮৭ জন, গাজীপুরে ১৬৮ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০৪ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১৩৪৯ জন, কক্সবাজারে ২৪৬ জন, রাঙ্গামাটি জেলায় ১০২, চাঁদপুরে ১১৪ জন, কুমিল্লায় ২০২ জন; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ৩২৫ জন, পাবনায় ১০৯ জন, বগুড়ায় ২০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় ১৮২ জন, যাশোরে ১৯৬ জন; সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ৪৪৮ জন, হবিগঞ্জে ১০৫ জন, মৌলভীবাজারে ১৩৫ জন; বরিশাল জেলায় ১২০ জন এবং ময়মনসিংহে ২৫৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১২ জন পুরুষ, ছয় জন নারী। তাদের মধ্যে আট জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ছয়জন, রাজশাহী বিভাগের একজন জন, খুলনা বিভাগের একজন, বরিশাল বিভাগের একজন এবং সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন একজন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে নয়জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, পাঁচজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, দুইজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং একজনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।