কোভিড: দৈনিক শনাক্ত ফের ১৫ হাজারের কাছাকাছি

করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের দাপটে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছে গেছে ১৫ হাজারের কাছাকাছি, যেমন পরিস্থিতি বাংলাদেশকে দেখতে হয়েছিল ২৫ সপ্তাহ আগে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপের সময়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2022, 11:48 AM
Updated : 24 Jan 2022, 12:52 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ হাজারের কম নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ হাজার ৮২৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে আরও ১৫ জনের।

তাতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়াচ্ছে ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা গত ছয় মাসের সর্বোচ্চ।

শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল সর্বশেষ গত বছরের ২৪ জুলাই, সেদিন প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩২ দশমিক ৫৫টিতে কোভিড পজিটিভ আসে।

আর ২০২০ সালের ১২ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, যা এ মাহামারীকালের রেকর্ড।

মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

 

এর আগে এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৩ অগাস্ট, সেদিন ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার আগে ২৮ জুলাই রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয় এক দিনে।

ডেল্টার সেই ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের মহামারী পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল গত বছরের শেষে। ডিসেম্বরে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ঘোরাফেরা করছিল ২০০ থেকে ৩০০ এর ঘরে। শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ২ শতাংশের নিচে।

কিন্তু বিশ্বে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার শুরুর পর জানুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশেরও আবার দ্রুত উঠতে থাকে সংক্রমণের গ্রাফ। 

জানুয়ারির প্রথম দিনও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারশর নিচে, ৬ জানুয়ারি তা হাজার ছাড়ায়, ১৬ জানুয়ারি পেরিয়ে যায় ৫ হাজারের ঘর, এরপর মাত্র চারদিনে তা দ্বিগুণ হয়ে ২০ জানুয়ারি ১০ হাজারের ঘর পেরিয়ে যায়। তার পরের চার দিনে তা ১৫ হাজারের কাছাকাছি চলে গেল।

রোববার ১০ হাজার ৯০৬ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে গত একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজার ৯২২ জন বা ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২৩৮ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৯৯৮ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৯ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।

এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার ৮৬৭ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে।

আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫২। গত ১৭ জানুয়ারি ছিল ৪২ হাজার ৯১৩ জন। অর্থাৎ, মাত্র এক সপ্তাহে সক্রিয় রোগী বেড়েছে প্রায় তিনগুন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে দেশে মোট ৬৭ হাজার ৪২৫ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ২৪ হাজার ১১ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১৮১ শতাংশ।

আর গত সাত দিনে মারা গেছেন আরও ৭৯ জন, আগের সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪২ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ৮৮ শতাংশ বেড়েছে।

এই ৭৯ জনের মধ্যে ৫২ জনেরই কোনো না কোনো ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি বা কোমরবিডিটি ছিল। তাদের ৭৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে এবং ৫১ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।

গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১০ হাজার ১৬৫ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৬৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

গত কয়েক মাস ধরেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর একটি বড় অংশ থাকে ঢাকার। তবে গত কয়েক দিন ধরে দেশের অন্যান্য জেলায়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৯৪২৬১ জন, গাজীপুরে ১২২ জন, নারায়ণগঞ্জে ২২২ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯৮৮ জন, কক্সবাজারে ২৪১ জন; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ২৩৮ জন, পাবনায় ১৪১ জন, বগুড়ায় ১৬৮ জন; খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় ১৫২ জন, যাশোরে ১৯৫ জন, কুষ্টিয়ায় ১৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এছাড়া সিলেট জেলায় ৩২৫ জন, বরিশাল জেলায় ১১৩ জন এবং ময়মনসিংহে ২৩৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে। 

যে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের নয় জন পুরুষ, ছয় জন নারী। তাদের মধ্যে ছয় জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগের একজন, রাজশাহী বিভাগের ১ জন, খুলনা বিভাগের একজন, বরিশাল বিভাগের একজন, সিলেট বিভাগের দুইজন এবং তিনজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

মৃতদের মধ্যে নয়জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, তিনজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং দুইজনের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর ১২ জানুয়ারি তা ১৬ লাখ পেরিয়ে যায়। তার আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ৩৫ কোটি ১৭ লাখের বেশি রোগী।