ডিসেম্বরে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেল্টার রোগীই বেশি ছিল: গবেষণা

বিশ্বে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার শুরুর পর ৮ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির মধ্যে যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন, তাদের বেশিরভাগই আগের ধরন ডেল্টায় সংক্রমিত ছিলেন বলে উঠে এসেছে এক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2022, 06:10 PM
Updated : 18 Jan 2022, 06:10 PM

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বিএসএমএমইউর জেনেটিকস অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা আঞ্জুমান বানু।

তিনি বলেন, গত বছরের ২৯ জুন থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল রেফারেল ল্যাবরেটরি, কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের ৭৬৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা নমুনা সংগ্রহ করা হয় এ গবেষণার জন্য। গত বছরের জুলাই, ডিসেম্বর এবং চলতি জানুয়ারি- এই তিন ভগে সেসব নমুনা থেকে ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্স করা হয়।

সবশেষ ৮ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে ৯৬টি নমুনার জেনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। সেসব রোগীর মধ্যে ৪০ জন ছিলেন বহির্বিভাগের, ৫৬ জন ছিলেন হাসপাতালে ভর্তি।

“আউটডোর পেশেন্টের নেওয়ার নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৮ জনের মধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ২০ শতাংশ ওমিক্রনে আক্রান্ত ছিল। বাকিদের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। আর যারা ইনডোরে ভর্তি ছিলেন, তাদের মধ্যে কারও ওমিক্রন পাওয়া যায়নি।”

এর আগে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নমুনা ছিল ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের। আর ২৯ জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত করা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে প্রায় ৯৮ শতাংশ নমুনা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের, ১ শতাংশ বেটা ভ্যারিয়েন্টের।

লায়লা আঞ্জুমান বানু জানান, এ গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়সী রোগীর নমুনা নেওয়া হয়েছে। তবে ২১ থেকে ৫৮ বছর বয়সের রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যাদের জেনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে তাদের অনেকেই দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও ওমিক্রন আক্রান্ত হয়েছেন। তৃতীয়বারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও পাওয়া গেছে।”

সোরা দেশে যখন সংক্রমণ বাড়ছে, তখন নমুনা নিয়ে ওমিক্রণের রোগী কেন কম পাওয়া গেল, তার একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেন উপাচার্য।

তিনি বলেন, “ওমিক্রন সংক্রমণে উপসর্গ মৃদু হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে হয়ত ওমিক্রন পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের রোগীদের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। তাই প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী আছে।”

অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন করোনাভাইরাসের সব ভ্যারিয়েন্টই বিপদজনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

“পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনও আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ টিকা গ্রহণ করতে হবে।”