কোভিড-১৯: ধীরে ধীরে মন বদলাচ্ছে ইউরোপের

কোভিড-১৯ এখন যে চেহারা পেয়েছে, তাতে একে আর প্যানডেমিক বা মহামারী হিসেবে না দেখে এনডেমিক বা ফ্লুর মত একটি সাধারণ রোগ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে স্পেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2022, 06:39 AM
Updated : 12 Jan 2022, 06:39 AM

ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে এই আহ্বান জানালো স্পেন। তারা বলছে, কোভিডকে সঙ্গে নিয়েই মানুষকে বসবাস করতে হবে, এটা মেনে নেওয়ার সময় এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘এনডেমিক’ শব্দটি দিয়ে নির্দিষ্ট একটি এলাকায় নির্দিষ্ট একটি রোগের সংক্রমণের ভিত্তিরেখা বোঝানো হয়।

উদাহরণ হিসেবে ম্যালেরিয়ার কথা বলা যেতে পারে, ম্যালেরিয়া পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়নি বা নতুন করে ফিরেও আসেনি। এটা দীর্ঘ সময় ধরে মানবজাতির সঙ্গে আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ম্যালেরিয়া বিভিন্ন মাত্রায় বিদ্যমান, যা একটি এনডেমিক রোগ হিসেবে বিবেচিত।

গতবছর মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কোভিড-১৯ কে প্যানডেমিক বা মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে। এখন এ রোগকে এনডেমিক বলার পক্ষে মত আসছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। 

বুধবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইউরোপে কোভিড-১৯ কে একটি এনডেমিক রোগ হিসেবে ঘোষণার ধারণাটি ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে। এ ধরনের ঘোষণা হলে, এই ভাইরাস মোকাবেলার রাষ্ট্রীয় নীতি বা কৌশলগুলোও বদলাবে।

ব্রিটিশ শিক্ষামন্ত্রী নাদিম জাহাভিও রোববার বিবিসিকে বলেন, “যুক্তরাজ্য কোভিড-১৯ কে প্যানডেমিক বা মহামারী থেকে এনডেমিক রোগ হিসেবে বিবেচনার পথে এগোচ্ছে।”

সোমবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এ নিয়ে বক্তব্য দেন। করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণে তুলনামূলক কম মৃত্যু ও রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে তিনি কোভিড-১৯ প্রতিরোধের কৌশল বদলের কথা বলেন। মহামারী ঠেকানোর কঠোর বিধিনিষেধের কৌশল বদলে স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যেই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব করেন।

সোমবার একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে সানচেজ বলেন, “কোভিড রোগটি প্যানডেমিক থেকে এনডেমিকে বিবর্তনের বিষয়টি আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে।”

অবশ্য ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও রোমানিয়ার মতো দেশগুলোতে এখনও দৈনিক শনাক্তের নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ফলে সেখানে এ ধরনের আলোচনা শুরুর সময় হয়তো এখনও আসেনি।

মঙ্গলবার ডব্লিউএইচও বলেছে, ওমিক্রন যেভাবে ছড়াচ্ছে, তা হার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগামী দুই মাসে ইউরোপের অর্ধেকের বেশি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

তবে হাসপাতালে ভর্তির হার এবার কম হওয়ায় সরকারগুলো তাদের কৌশল পর্যালোচনায় উৎসাহী হতে পারে।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, ফাইল ছবি

এখন পর্যন্ত জার্মানি ও ফ্রান্সে কঠোর বিধিনিষেধ বজায় আছে, বিশেষ করে যারা টিকা নেয়নি তাদের জন্য। ইউরোপে সবচেয়ে কড়া লকডাউন বজায় রেখেছে নেদারল্যান্ডন।

ইউরোপের মধ্যে আয়ারল্যান্ডে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও সেদেশের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন টিকা বাধ্যতামূলক করতে নারাজ। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডে ক্রুও বলছেন তার সরকার টিকা নেওয়ার বিষয়টিকে ব্যক্তির সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিতে চান।

অনেক দেশই এখন কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা কমিয়ে এনেছে। এমন দেশের তালিকায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে চেক রিপাবলিক। সেদেশে কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির আইসোলেশনের মেয়াদ পাঁচ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

ভ্রমণ বিধিনিষেধ এখন আর সংক্রমণের হার কমাতে খুব একটা কাজে আসছে না। ওমিক্রন প্রথম যেদেশে শনাক্ত হয়েছিল, সেই দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর প্রথম দেশ হিসেবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাজ্য। কিন্তু সেখানেও ওমিক্রন ধরনটি ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে। একইভাবে, ব্রিটেনের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির পরেও ফ্রান্সে ওমিক্রণের বিস্তার ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে গেছে।

সাক্ষাৎকারে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বলেন, তার সরকার গত সপ্তাহ থেকে একটি নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এবং সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যারোলিনা দারিয়াস বিষয়টি ইউরোপের সহযোগীদের সামনে তুলে ধরবেন।

স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত সাত দিনে দেশটিতে নতুন ৬ লাখ ৯২ হাজার জনের কোভিড শনাক্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বছর একই সময়সীমায় মাত্র এক লাখ ১৫ হাজার জন শনাক্তের মধ্যে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।