সাধারণ সর্দি-জ্বরে ‘হয়ত মিলতে পারে’ কোভিড থেকে সুরক্ষা

সাধারণ সর্দি-জ্বরে মানবদেহে যে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধেও তা কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে বলে ধারণা পাওয়া গেছে এক গবেষণায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2022, 07:12 PM
Updated : 11 Jan 2022, 07:12 PM

নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক ঠাণ্ডা-সর্দি থেকে সেরে ওঠার পর যাদের শরীরে নির্দিষ্ট কিছু সুরক্ষা কোষের বিষয়ে ‘স্মৃতি ভাণ্ডার’ গড়ে উঠেছে, তাদের কোভিড হওয়ার ঝুঁকি কম।

বিবিসি জানিয়েছে, এই গবেষণা চালানো হয়েছে একেবারেই ছোট পরিসরে। মোট ৫২ জনের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছে, যারা কোনো কোভিড-১৯ আক্রান্তের সঙ্গে একই বাসায় ছিলেন, কিন্তু নিজেরা আক্রান্ত হননি।

গবেষকেরা বলছেন, জ্বর-সর্দি থেকে পাওয়া সুরক্ষা যদি সত্যিই কোভিডে কার্যকর হয়, তারপরও শুধু এর ওপর নির্ভর করার কথা ভাবা ঠিক হবে না; এখন পর্যন্ত টিকাই এক্ষেত্রে কিছুটা নির্ভরযোগ্য উপায়।

তবে মানবদেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা ভাইরাস ঠেকাতে কীভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে এই গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে বলেই তাদের ধারণা।

ফাইল ছবি

এক ধরনের করোনাভাইরাস থেকে কোভিড-১৯ রোগ হয়। আবার অন্য ধরনের করোনাভাইরাস সাধারণ কিছু ঠাণ্ডা-সর্দির জন্য দায়ী। তাই বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, এক ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি আদৌ অন্য ধরনের করোনাভাইরাস ঠেকাতে সহায়ক হতে পারে কিনা।

বিশেষজ্ঞরা এটাও বলেছেন, কেউ যদি ধরে নেন যে তিনি সম্প্রতি সর্দি-ঠাণ্ডা থেকে সেরে উঠেছেন বলে কোভিড-১৯ আর হবে না, সেটা হবে ‘খুবই বড় ভুল’, কারণ সব স্বাভাবিক সর্দি-কাশির কারণ করোনাভাইরাস নয়।

কিছু লোক কেন এ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসামাত্র কোভিডে আক্রান্ত হন, আবার কিছু লোক কেন সংক্রমিত হন না, তা আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছেন লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের এই গবেষক দল।

‘টিকা খোঁজার নতুন পথ’

গবেষকরা তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করেছেন দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ টি-সেলের ওপর। কিছু টি-সেলের কাজ হল একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসে সংক্রমিত কোষ শনাক্ত করে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া- যেমন ঠাণ্ডার জন্য দায়ী কোনো ভাইরাস।

একবার ঠাণ্ডা সেরে গেলে, কিছু টি-সেল শরীরে থেকে যায় স্মৃতি ভাণ্ডার হিসেবে। তাতে ওই নির্দিষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শরীরে প্রস্তুত থাকেঅ পরের বার ওই ভাইরাস শরীরে এলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের এই গবেষক দল গত বছর সেপ্টেম্বরে ৫২ জনের ওপর এই গবেষণা চালান, যারা তখনও টিকা নেননি, কিন্তু এমন ব্যক্তিদের সহচর্যে ছিলেন, যাদের মাত্রই কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।

২৮ দিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওই দলের অর্ধেক কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন এবং বাকি অর্ধেকের কোভিড হয়নি। কোভিড না হওয়া দলের এক-তৃতীয়াংশের দেহের রক্তে উচ্চ মাত্রায় সুনির্দিষ্ট টি-সেলের স্মৃতি ভাণ্ডার পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই স্মৃতি ভাণ্ডারের টি-সেলগুলো তৈরি হয়েছিল আগে কোনো এক সময়ে, যখন ওইসব ব্যক্তি আরেক ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা সাধারণ সর্দি-ঠাণ্ডার ভাইরাস।

গবেষকরা অন্যান্য সম্ভাবনাও বিবেচনায় নিয়েছেন, যেমন বাতাসের চলাচল এবং তাদের বাড়িতে থাকা কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তি কতোটা সংক্রমিত হয়েছিলেন - যেগুলোও অন্যদের সংক্রমণে প্রভাব ফেলতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের অধ্যাপক ড. সিমন ক্লার্ক বলেন, “এই গবেষণা স্বল্প পরিসরে পরিচালিত হলেও এটা আমাদের দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে নতুন তথ্য যোগ করেছে এবং ভবিষ্যতে টিকা তৈরিতে এটা সহায়ক হতে পারে।”

তিনি বলেন, “এই গবেষণার তথ্য নিয়ে অতিকথন ঠিক হবে না। যারা কোভিডে মারা গেছেন, বা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের কখনো করোনাভাইরাস বাহিত সর্দি-কাশি হয়নি- এমন ভাবার সুযোগ নেই।

“কেউ যদি সম্প্রতি ঠাণ্ডা থেকে সেরে ওঠেন, তাহলে তার শরীরে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলে ধরে নেওয়াও খুবই মারাত্মক ভুল হবে, কারণ সাধারণ সর্দি-ঠাণ্ডার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করোনাভাইরাসের কারণে হয়।”

ওই গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক অজিত লালভানিও স্বীকার করেছেন, কোভিড থেকে সুরক্ষার মূলে আছে টিকা। শরীর কীভাবে কাজ করে তা জানার মাধ্যমে নতুন টিকা প্রস্তুত করার কাজ সহজ হবে।

এখন যে টিকাগুলো রয়েছে, সেগুলো করোনাভাইরাসের বহিরাবরণের প্রোটিন কাঁটাগুলোকে চিহ্নিত করে আক্রমণ করে। কিন্তু ভাইরাসের ধরন বদলের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের প্রোটিন কাঁটাও বদলায়।

অন্যদিকে দেহের টি-সেলগুলো ভাইরাসের ভেতরের প্রোটিনকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়, যেগুলো ভাইরাসের ধরন বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলায় না। ফলে টি-সেলের মত করে কাজ করতে সক্ষম টিকা প্রস্তুত করা গেলে কোভিডের বিরুদ্ধে বিস্তৃত ও দীর্ঘ-মেয়াদী সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।