ওমিক্রনের সুনামিতে ‘ভিন্ন বাস্তবতার’ মুখে যুক্তরাষ্ট্র

কোভিড শনাক্তের গ্রাফে বিরাট উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে ২০২২ সাল, যার পেছনে রয়েছে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, এবারের পরিস্থিতি মহামারীর অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ‘ভিন্ন’।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2022, 06:56 PM
Updated : 2 Jan 2022, 06:56 PM

অরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ড. এস্তার চো সিএনএনকে বলেছেন, “এখন পর্যন্ত আমরা যেটা বুঝতে পারছি, সংক্রমণের আগের ঢেউয়ে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে জায়গায় ছিল, এখন তার অবস্থা অনেকটাই আলাদা।

“বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীকে আমরা হারিয়েছি; স্বাস্থ্য খাতে কর্মী সংখ্যা এখন ওই সময়ের তুলনায় অন্তত ২০ শতাংশ কম। এটা আরও বেশিও হতে পারে।”

জরুরি চিকিৎসা বিভাগের এ অধ্যাপক বলছেন, করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটি এত বেশি সংক্রামক যে তার বহু সহকর্মী ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়ে কোয়োরেন্টিনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকা পড়া যাত্রীরা, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

এদিকে বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কাজের বাইরে থাকায় নতুন চিকিৎসক নিয়োগও বাধাগ্রস্ত হবে। বেইলর বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিন ড. পেটার হোটেজ বলছেন, এখন হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি বেড়ে গেলে তা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

“এটা অন্য ধরনের এক ধাক্কা। একদিকে হাসপাতালে রোগী বাড়তে থাকবে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কমতে থাকবে।

গত ২৮ দিনেই যুক্তরাষ্ট্রে ৫৭ লাখ ৫২ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ হাজারের বেশি মানুষের।

কেবল স্বাস্থ্য খাত নয়, ওমিক্রন দাবানলের গতিতে ছড়াতে থাকায় এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জরুরি পরিষেবায় বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কর্মী সংকটের কারণে নিউ ইয়র্ক সিটির নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে পাতাল রেলের কয়েকটি পথে সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

নিউ ইয়র্কে কোভিড পরীক্ষার জন্য কেউ। ছবি: রয়টার্স

ওমিক্রনের কবলে পড়ে ফায়ার সার্ভিসে কর্মী কমে যাওয়ায় ওহাইওর সিনসিনাটি শহরের মেয়র জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত যাত্রীদের সংস্পর্শে আসায় এয়ারলাইন্সগুলোর অনেক কর্মী কোয়ারেন্টিনে আছেন। তাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ডিজাস্টার মেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. জেমস ফিলিপ সিএনএনকে বলেছেন, “আমরা আবার দ্রুত রোগী বাড়তে দেখছি, এতটা দ্রুত মহামারীর মধ্যে আগে দেখা যায়নি। দেশজুড়ে কী যে ভয়ংকর পরিস্থিতি আসছে! এখনই সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।’

স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, মূলত টিকা না নেওয়া ব্যক্তিরাই এখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বেশি, পরিস্থিতি অনেকটা গত বসন্তের মত, যখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক এলকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গত এক বছর ধরে কোভিড টিকা নেওয়ার তাগাদা দিয়ে আসছেন, এখন বুস্টার ডোজ নিতে বলছেন; তারপরও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৬২ শতাংশ নাগরিক দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। আর ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-সিডিসি।

ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের অধ্যাপক ড. উইলিয়াম শাফনার সিএনএনকে বলেন, “আপনি যদি টিকা না নিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। আমার এখানে যারা ভর্তি হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই টিকা না নেওয়া।”

লুইজিয়ানা রাজ্যের আওয়ার লেডি অভ দ্য লেক রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ড. ক্যাথরিন ও’নিল জানাচ্ছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া এবং জরুরি বিভাগে আসা রোগীর সংখ্যা এক সপ্তাহে তিনগুণ বেড়েছে।

“টিকা নেওয়া লোকজন তেমন অসুস্থ হচ্ছে না; যাদের অন্য রোগ আছে, তাদের ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলেও দ্রুতই সেরে উঠছেন।”

কিন্তু টিকা না নেওয়া লোকজন সংক্রমিত হলে জটিলতা দেখা দিচ্ছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “তাদের বেশিরভাগের জন্য ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।”

এদিকে ওমিক্রন ঢেউয়ে হাসপাতালে শিশুদের ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মহামারী শুরুর পর এখন সর্বোচ্চ সংখ্যক শিশু আসছে কোভিড নিয়ে।

সিডিসি এবং মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর জানিয়েছে, গত ২৮ ডিসেম্বর সমাপ্ত শেষ হওয়া সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৩৭৮ জন করে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি। এ পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ করে ভার্চুয়ালি ক্লাস নিচ্ছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।