ফাইজারের টিকার সুরক্ষা ‘আংশিক ভেদ করতে পারে’ ওমিক্রন

ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার সুরক্ষা ‘আংশিক ভেদ করতে পারে’ এ ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2021, 04:46 AM
Updated : 25 Jan 2022, 05:43 PM

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনভাইরাসের এই নতুন ধরনটির ওপর ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রথম ল্যাব টেস্টের ফলাফলে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আশা করছে, করোনভাইরাসের যে টিকাগুলো এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, ওমিক্রনে আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হওয়া ঠেকাতেও সেসব টিকা কাজ করবে।

গবেষকরা বলছেন, ফাইজারের টিকায় শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি এমনিতে করোনাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে যতটা কার্যকর, জিন কাঠামোতে অনেক বেশি বদলে যাওয়া ওমিক্রনের ক্ষেত্রে সেই হার বেশ কম।   

তাতে আতঙ্কিত না হয়ে বরং আশাবাদী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডব্লিউএইচওর জরুরি বিভাগের পরিচালক ডা. মাইক রায়ান।

তিনি বলছেন, টিকার সুরক্ষা ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর চেয়ে ওমিক্রন বেশি সক্ষমতা রাখে- এমন কোনো লক্ষণও এ গবেষণায় দেখা যায়নি।  

“আমাদের হাতে থাকা টিকাগুলোর কার্যকারিতা বেশ ভালো। যদি গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে সুরক্ষা বা হাসপাতালে যাওয়া এড়ানোর কথা বলি, তাহলে এ পর্যন্ত সবগুলো ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেই টিকাগুলোর কার্যকারিতা প্রমাণিত। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও সেটা ঘটবে না, তেমন ভাবার কোনো কারণ এখনও ঘটেনি।”   

ডা. রায়ান বলছেন, এ পর্যন্ত যে তথ্য উপাত্ত তারা পেয়েছেন, তাতে ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে ডেল্টা বা অন্য ধরনগুলোর চেয়েও গুরুতর অসুস্থতা তৈরি হওয়ার কোনো লক্ষণ তারা দেখেননি।

“বরং বলা যায়, এখন পর্যন্ত ওমিক্রনের ক্ষেত্রে অসুস্থতার মাত্রা কমই দেখা যাচ্ছে।”

গবেষণায় যায় জানা গেছে

দক্ষিণ আফ্রিকার ওই গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরনকে নিষ্ক্রিয় করতে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি করে, ওমিক্রনের ক্ষেত্রে তা হতে পারে ৪০ ভাগের এক ভাগ। 

এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া আফ্রিকা স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক অ্যালেক্স সিগাল বলেন, টিকার প্রতিরোধ পুরোপুরি ভেঙে ফেলার সক্ষমতা ওমিক্রনের নেই।

তিনি বলেন, ১২ জনের রক্ত পরীক্ষার ভিত্তিতে যে ফলাফল পাওয়া গেছে ওমিক্রনের ক্ষেত্রে, তা ‘প্রত্যাশার থেকে ভালো’। আগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি টিকা দেওয়ার ফলে যে সুরক্ষা কাঠামো তৈরি হয়েছে, তাও ওমিক্রনকে নিষ্ক্রিয় করতে ভালো ফল দেখিয়েছে। এর মানে হল, টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে কার্যকারিতা আরও বাড়বে।

বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, আগের সংক্রমণের ফলে পওয়া অ্যান্টিবডি, টিকা আর বুস্টার ডোজের কার্যকারিতা মানুষকে গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে।

ওমিক্রনের ক্ষেত্রে ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণার আরও তথ্য আগামীতে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং অন্যান্য টিকাগুলো নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর, সে বিষয়েও কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

করোনাভাইসের ধরনগুলোর মধ্যে ওমিক্রনের জিনবিন্যাসেই সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন বা মিউটেশন পাওয়া গেছে। আগে যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদেরও অনেকে নতুন এ ধরনের শিকার হচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বরিস জনসনের মুখপাত্র বলেছেন, প্রাথমিক ধারণা বলছে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের চেয়ে ওমিক্রন বেশি সংক্রামক হতে পারে।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে মহামারী শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে ২৬ কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৫০ লাখের বেশি মানুষের। 

বিবিসি লিখেছে, বর্তমানে মানুষের হাতে থাকা কোভিড টিকাগুলো তৈরি করা হয়েছিল করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে ভ্যারিয়েন্টের জিন বিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে। ফলে অনেক বেশি বদলে যাওয়া নতুন ধরন ওমিক্রনের ক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতা যে কমে যাবে, তা অনুমিতই ছিল।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষণা থেকে এটা এখন বোঝা যায়নি যে এখনকার টিকাগুলো ওমিক্রন থেকে ঠিক কতটা সুরক্ষা বিশ্বের মানুষকে দিতে পারবে।