একবার কোভিডে আক্রান্তরা ওমিক্রনে রেহাই পাবেন?

যারা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন অনেকের মনেই জাগাচ্ছে নতুন প্রশ্ন। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2021, 05:51 PM
Updated : 3 Dec 2021, 06:35 PM

গত দুই বছরের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা যা জানতে পেরেছেন, তাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি চিরস্থায়ী নয়, এমনকি খুব বেশি দীর্ঘমেয়াদীও নয়।

তারপরও ওই অ্যান্টিবডির আয়ু ছয় মাস থেকে এক বছর হতে পারে বলে এর আগে ধারণা দিয়েছিলেন গবেষকরা, যাদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শক্তি কমে আসে।  

এখন প্রশ্ন হল, গত কয়েক মাসের মধ্যে যারা কোভিডে ভুগে সেরে উঠেছেন, তাদের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি কি ওমিক্রন থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে?

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, মাত্র সপ্তাহখানেক আগে শনাক্ত হওয়া এই নতুন ধরনটি নিয়ে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ওমিক্রনের সামনে ‘খুব সামান্যই’ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে।

নতুন এই ধরনটি শনাক্তের প্রথম খবরটি আসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে। এক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তারা বলছেন, সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।

করোনাভাইরাসের আগের ধরন ‘বেটা’ বা ‘ডেল্টার’ ক্ষেত্রে এমন ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ দেখা যায়নি বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীদের ওই সমীক্ষা প্রতিবেদন এখনও প্রকাশিত বা রিভিউ হয়নি। আগে আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার হার কত, তাও বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেননি।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট  ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস বুধবার জানিয়েছে, নভেম্বরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার পজিটিভ নমুনাগুলোর জিন বিন্যাস করে দেখা গেছে, তিন চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণের কারণ ছিল ওমিক্রন।

তথ্য পর্যালোচনায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের আগের সংক্রমণে তৈরি হওয়া ইমিউনিটিকে ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা ওমিক্রনের যথেষ্ট ভালো।

আফ্রিকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয়ে এক অনালাইন ব্রিফিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা আরও জোর দিয়ে একই উপসংহারে পৌঁছানোর কথা বলেছেন।

এ পর্যন্ত পওয়া পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ৪০ শতাংশ মানুষ গত দুই বছরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩০ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। তারপরও নতুন করে সংক্রমণ খুব দ্রতই বাড়ছে।

কমিউনিকেবল ডিজিজ ইনস্টিটিউটের অনুজীববিজ্ঞানী আন ভন গোটবার্গ বলেন, “আমাদের ধারণা, আগের সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিতে ওমিক্রন থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে না।”

বিশ্বে সংক্রমণের হার এখন দক্ষিণ আফ্রিকাতেই সবচেয়ে বেশি। যদিও মোট আক্রান্তের সংখ্যা বিচার করলে অন্য অনেক দেশের তুলনায় তা কম।

নভেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সেখানে দৈনিক শনাক্ত রোগীর গড় সংখ্যা ছিল ২৬০ জনের মত। গত মঙ্গলবার তা চার হাজার ৩০০ জনে পৌঁছায়। এর পরদিনই তা এক লাফে আট হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে যায়। বৃহস্পতিবার শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ১১ হাজারের বেশি রোগী।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হল এর জিন বিন্যাসে পরিবর্তন বা মিউটেশনের সংখ্যা। এর আগের কোনো ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেই জিন বিন্যাসে এত বেশি মিউটেশন আর দেখা যায়নি। ফলে এ পর্যন্ত তৈরি হওয়া টিকাগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কাজ করবে, সেই প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।

টিকার কার্যকারিতা নিয়ে এখনও কোনো উত্তর না মিললেও বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন অনেক বেশি দ্রুত ছড়ানোর সক্ষমতা রাখে।  এরইমধ্যে প্রায় দুই ডজন দেশে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট পৌঁছে গেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে,আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপে ওমিক্রন সবচেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তার করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। খুব দ্রুতই এ ধরনটি পৃথিবীর জনবহুল প্রতিটি শহরে ছড়িয়ে পড়বে বলে তাদের আশঙ্কা।

আরও পড়ুন