কোভিড: বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘ওমিক্রন’

দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার পর নতুন আতঙ্কের ঢেউ বইতে শুরু করেছে বিশ্বে; এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশ ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে ভ্রমণ বিধিনিষেধ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2021, 07:53 PM
Updated : 27 Nov 2021, 07:07 AM

বিবিসি জানিয়েছে, গবেষকরা করোনাভাইরাসের এই নতুন ভ্যারিয়েন্টকে চিহ্নিত করছেন বি.১.১.৫২৯ নামে। তবে আলোচনার সুবিধার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন’। জাতিসংঘের এই সংস্থা ওমিক্রনকে তালিকাভুক্ত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে।

করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর মতো নতুন ধরনটির একটি গ্রিক নাম দেওয়া হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। সর্বশেষ পুরো পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো ধরনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ডেল্টা’।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫১ লাখ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২৬ কোটির বেশি রোগী।

নতুন ধরনটি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আফ্রিকার কয়েকটি দেশের যাত্রীদের ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে শুক্রবার। অবশ্য এমন উদ্যোগকে ‘তড়িঘড়ি’ আখ্যায়িত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বলা হচ্ছে, চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়ার পর নতুন এই করোনাভাইরাসের যতগুলো ধরন এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ওমিক্রনেই জিন বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে সবচেয়ে বেশি।

এর মানে হল, করোনাভাইরাসের যেসব টিকা এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলো ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে। আবার জিন বিন্যাসে পরিবর্তনের কারণে এ ভাইরাস অনেক বেশি দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখতে পারে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য বলছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ কতোটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।

গত মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন এ ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয়। এরই মধ্যে বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং এবং ইসরায়েলেও শনাক্ত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা ওমিক্রনকে বর্ণনা করেছেন এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে। তবে অক্সফোর্ডের একজন বিজ্ঞানী বিবিসিকে বলেছেন, “এটা খারাপ খবর হলেও অতটা ভয়ঙ্কর কিছু নয়।”

নতুন এ ধরনটি শনাক্ত হওয়ার খবরে যুক্তরাজ্য এবং নেদারল্যান্ডস আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কিছু দেশের সঙ্গে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। সেইসঙ্গে ভ্রমণ বিধি কঠোর করেছে নতুন আরও অনেক দেশ।

যেসব দেশের যাত্রীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হলো- দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, এসোয়াতিনি (সাবেক সোয়াজিল্যান্ড), লেসোথো।

সিঙ্গাপুর, ইতালি, ফ্রান্স এবং ইসরায়েল তাদের লাল তালিকায় মোজাম্বিকের নামও রেখেছে।

আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোর সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন।

জাপান ঘোষণা দিয়েছে, শনিবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভ্রমণে আসা ব্যক্তিদের ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং এই সময়ের মধ্যে তাদের চারটি পরীক্ষা করা হবে।

শনিবার থেকে আফ্রিকার ওইসব দেশে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় কাটিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের শনিবার থেকে চেক রিপাবলিকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে মহামারীর চতুর্থ ঢেউয়ের মুখে পড়া জার্মানি ঘোষণা দিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে তারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা নিজ দেশের নাগরিকদেরই কেবল প্রবেশের অনুমোদন দেবে।

সেইসঙ্গে ভ্রমণকারী ব্যক্তির কোভিড টিকার পূর্ণ দুটি ডোজ নেওয়া থাকলেও তাকে জার্মানিতে যাওয়ার পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।  

বিবিসি জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা এবং হংকং থেকে আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করার ওপর জোর দিচ্ছে ভারত।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ থেকে এমন ভ্রমণ বিধি আরোপ করার নিন্দা জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা।

শুক্রবার বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এমন পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারণ করা বিধি এবং মানদণ্ডের সম্পূর্ণ বিরোধী।”   

ভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ যে বেশি মাত্রায় সংক্রামক, সে কথা স্বীকার করলেও তিনি বলেছেন, টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা এর রয়েছে কি না বিজ্ঞানীরা এখনও তার কোনো নজির দেখাতে পারেননি। 

সাউথ আফ্রিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের  চেয়ারপারসন অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বিবিসিকে বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর ভ্রমণ বিধি আরোপের সিদ্ধান্ত অতি তড়িঘড়ি নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফাউচি সিএনএনকে বলেছেন, নতুন ধরনটি নিয়ে আরও জানতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছে তার দেশ।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের সংক্রামক রোগ বিষয়ের অধ্যাপক স্যার পিটার হর্বিও করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

তিনি বলেন, “এর অনেকগুলো বিপদ চিহ্ন রয়েছে। আমরা যতেটা ভাবতে পারি কিংবা আমরা যতেটা পরিকল্পনা করতে পারি, সেটা তার চেয়েও বেশি বদলেছে।”