মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাই টিকা নিতে পারছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ বস্তির ১৫ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
বস্তির ভেতরে আটটি কেন্দ্রের মোট ২৫টি বুথে ১০ দিনব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে। তারপরও যদি কেউ বাদ পড়ে, তাদের জন্য সময় বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
পল্লীবন্ধু এরশাদ শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মাঠে দীর্ঘ লাইনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় টিকা নিচ্ছেন বস্তির নিম্ন আয়ের মানুষ। এ কেন্দ্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিতে দেখা গেছে।
টিকা পেয়ে খুশি বস্তির বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রী জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, “আমরা কোনোদিন ভাবি নাই টিকা পাব। বস্তির মানুষের খবর কে রাখে? তারপরও যে আমাদের জন্য টিকার ব্যবস্থা হইছে, এতেই আমরা খুশি।”
বস্তির সব বাসিন্দাদের টিকার আওতায় আনা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা টিকা পাইছি, যাতে সব বস্তির মানুষই টিকা পায় সেই ব্যবস্থাও যেন সরকার করে।”
ষাটোর্ধ্ব আবদুল হাই টিকা নেওয়ার পর চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা বস্তির মানুষ, গরিব মানুষ। আমাগো টিকা না দিলেও তো কিছু করতে পারতাম না। টিকা পাইছি এতেই আমরা অনেক খুশি। বাসার কাছে চইলা আইছে। টিকা নিমু না?”
গৃহকর্মী রাহিমা খাতুনের ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় এতদিন টিকা নিতে পারেননি। জানালেন, এবার জন্মনিবন্ধন কার্ড দিয়েই টিকা নিতে পেরেছেন তিনি।
পৌনে এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকা পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই নারী বলেন, “আমার ভোটার আইডি কার্ড নাই। রেজিস্ট্রেশনও করতে পারি না। আজকে শুনলাম জন্মনিবন্ধন দিয়ে টিকা নেওয়া যাবে। তাই টিকা নিতে চলে আসছি।
এই বস্তিতে ১৮ বছর ধরে থাকেন মুদি দোকানি সুজন মিয়া। টিকা পেতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি।
“রেজিস্ট্রেশন করতে পারি নাই বলে এতদিন টিকা নিই নাই। আজকে শুনলাম রেজিস্ট্রেশন লাগব না, শুধু ভোটার আইডি কাগজ লয়া টিকা দেওন যাইব। পরে তো অল্প সময়েই টিকা পায়া গেছি। এতো সহজ আগে তো বুঝি নাই।”
টিকাকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, কড়াইল বস্তির ৮টি কেন্দ্রের ২৫টি বুথে ১৫ হাজার টিকা দেওয়া হবে প্রথম দিন।
“মানুষ অনেক উৎসাহ নিয়ে টিকা নিচ্ছে। এই বস্তিতে লক্ষাধিক মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। কর্মজীবী যেসব মানুষ আছেন, তাদের জন্য শুক্র ও শনিবারও টিকাদান কর্মসূচি চলবে।”
এর আগে সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, কড়াইল বস্তিতে টিকা দেওয়ার পরে পরে ঢাকার অন্যান্য বস্তি এবং দেশের বড় শহরের বড় বস্তিগুলোও পর্যায়ক্রমে টিকার আওতায় আসবে।
তিন লাখের বেশি লোকের বসতি ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তি কড়াইলের কয়েকটি টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। তবে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন টিকা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা।
আন্তর্জাতিক এ সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক আনোয়ার হোসেন বলেন, “২৫টি বুথের প্রতিটিতে প্রতিদিন ৬০০ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। ১০ দিনব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে। তারপরও যদি কেউ বাদ পড়ে, তাদের জন্য সময় বাড়ানো হবে।
“টিকার যোগ্য এই বস্তির সবাই টিকা নিতে পারবেন।”
আরও পড়ুন