মলনুপিরাভির: কারা খাবে, কীভাবে খাবে, পাবে কোথায়?

মহামারীর দুই বছর পূর্ণ হওয়ার ঠিক আগে এসেছে কোভিড-১৯ উপশমে মুখে খাওয়ার বড়ি মলনুপিরাভির, যা বাংলাদেশের বাজারেও এখন মিলছে।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2021, 07:09 PM
Updated : 11 Nov 2021, 07:09 PM

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ইমোরিভির, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের মনুভির এরইমধ্যে বিভিন্ন ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি মোলভির আগামী শনিবার থেকে পাওয়া যাবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা উদ্ভাবনের পর তা প্রয়োগের মধ্যে রোগ উপশমে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কোম্পানি মার্ক শার্প অ্যান্ড ডোম (এমএসডি) ও রিজেবাক বায়োথেরাপিউটিক যৌথভাবে তৈরি করেছে লাগেভ্রিও (মলনুপিরাভির) নামে মুখে খাওয়ার এই ওষুধ।

সর্দি-জ্বরের চিকিৎসার জন্য তৈরি বড়ি মলনুপিরাভির করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগে আশা জাগানো ফলাফল দেখিয়েছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাদের তৈরি ওষুধ মলনুপিরাভির মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা কোভিড রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারছে বলে প্রমাণ মিলেছে।

গত সোমবার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে মলনুপিরাভির তৈরি ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। পরে এসকেএফ, স্কয়ার ও রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালসও সে অনুমোদন পায়। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

কারা, কীভাবে খাবে

নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন, মৃদু থেকে মাঝারি লক্ষণযুক্ত এবং কোনো একটি কোমর্বিডিটি আছে, এমন ব্যক্তিরা মলনুপিরাভির ব্যবহার করতে পারবেন বলে চিকিৎসকদের ভাষ্য। ১৮ বছরের নিচে, গর্ভবতী নারীরা এই ওষুধ খেতে পারবে না।

মার্ক শার্প অ্যান্ড ডোম (এমএসডি) ও রিজেবাক বায়োথেরাপিউটিকের তৈরি মলনুপিরাভির।

মলনুপিরাভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফলের বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, আক্রান্ত রোগীকে প্রতিদিন দুই বার ২০০ মিলিগ্রামের ক্যাপসুল ৪টা করে খেতে হবে। ওষুধ ব্যবহার করতে হবে পাঁচ দিন।

তিনি বলেন, বয়স্ক, ডায়াবেটিকসহ কোমর্বিডিটি আছে এমন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু এমন কোনো ওষুধ ছিল না যেটা রোগের তীব্রতা কমিয়ে দিতে পারবে।

“করোনাভাইরাসের মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত রোগী যারা বাসায় থাকে, হাসপাতালে যাচ্ছে না। কিন্তু রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে তাদের জন্য এই ওষুধটা কাজে দেবে।”

তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা এখনও মলনুপিরাভির ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া শুরু করেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার চিকিৎসকের নিয়ে একটি সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করবে। এরপর এটি ব্যবহারে চিকিৎসকদের পরামর্শ দেওয়া যাবে।

“আমাদের চিকিৎসকরাও বিষয়টি নিয়ে এখনও জানে না ভালোভাবে। সায়েন্টিফিক সেশনটা হয়ে গেলে চিকিৎসকদের জানানো যাবে। এটা করোনাভাইরাসের চিকিৎসা গাইডলাইনেও যুক্ত করা হবে। কমিটি বসবে, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।”

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. রোবেদ আমিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই ওষুধের সুনির্দিষ্ট ডোজ, সুনির্দিষ্ট ডিউরেশনে আছে। যারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করবেন তারা, এই বিষয়টি জানবেন না। বুঝবেন না কয় ডোজ কতক্ষণ পর পর নিতে হবে।”

“এভাবে ওষুধ নিলে কতগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে,” সতর্ক করেন তিনি।

দাম কত, কোথায় পাবেন?

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রতিটি ক্যাপসুলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ৫০ টাকা। এই দাম সবগুলো কোম্পানির জন্যই প্রযোজ্য বলে জানিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য ব্যয় হিসাব করে একটা দাম নির্ধারণ করেছে। ওই দাম প্রস্তাব করার পর অধিদপ্তর যাচাইবাছাই করে তা অনুমোদন দিয়েছে।

“তারা ক্যালকুলেশন করে একটা প্রাইস আমাদের কাছে সাবমিট করে। আমরা সেটা দেখে যদি যুক্তিযুক্ত মনে হয়, তাহলে ওই দামের অনুমোদন দিই। মলনুপিরাভিরের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। উনারা প্রপোজ করেছেন আমরা যাচাইবাছাই করে ৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। প্রতিটি কোম্পানিই এই ওষুধ এই দামে বিক্রি করবে।”

করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলে টানা পাঁচ দিন খেতে হবে এই ওষুধ। ২০০ মিলিগ্রামের ৪টি করে ক্যাপসুল দৈনিক দুই বার খেতে হবে।

সে হিসেবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত একজন রোগীকে পাঁচ দিনে ২ হাজার টাকার ওষুধ সেবন করতে হবে।

এখন পর্যন্ত বাজারে আসা দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিটি ক্যাপসুল ৫০ টাকা করে রাখছে, তবে প্রথম আসা বেক্সিমকোর ক্যাপসুল বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৭০ টাকায়।

এসকেএফের তৈরি মনুভির মঙ্গলবার থেকে বাজারজাত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) ডা. মুজাহিদুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এখন ঢাকায় করোনাভাইরাসের চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতালগুলোর আশপাশের ফার্মেসিতে এই ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে।

“ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেটে অল্প অ্লপ করে সরবরাহ করেছি। ধীরে ধীরে সারাদেশেই পাঠানো হবে।”

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি মোলভির।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী, মহাখালী, বনশ্রী ও ধানমণ্ডি এলাকায় গিয়ে খুব অল্প ফার্মেসিতে ওষুধটি পাওয়া গেছে।

বনশ্রীর লাজফার্মায় বেক্সিমকোর ইমোরিভির পাওয়া গেছে। ১০টি ক্যাপসুলের একটি প্যাকেটের দাম ৭০০ টাকা। একটি ক্যাপসুলের দাম পড়ছে ৭০ টাকা।

শরীফুল হাসান নামে একজন বিক্রয়কর্মী বলে, “নতুন এই ওষুধ আমাদের এখানে মঙ্গলবার এসেছে। আমরা প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করছি না।”

লাজফার্মার কলাবাগান শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সেখানে মলনুপিরাভির আসেনি।

মহাখালীর বেস্ট, মা ফার্মেসি, বনানী বাজারের আমেনা এবং মক্কা ফার্মেসিতে খুঁজে শুধু মক্কা ফার্মেসিতে ওষুধটি পাওয়া গেছে।

মক্কা ফার্মেসির বিক্রেতা উত্তম চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় ওষুধটি এসেছে। তবে এখনও বিক্রি হয়নি।

বেক্সিমকোর চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, তাদের ২০০ গ্রামের প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ৭০ টাকা।

প্রতিটি ক্যাপসুলের দাম ২০ টাকা বেশি কেন- জানতে চাইলে রাব্বুর রেজা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের বর্তমান মূল্য ৭০ টাকা। আমরা এই মূল্য রিভিউয়ের চিন্তা করছি। সামনে এটা রিভাইজ করা হবে।”