কোভিডে মৃত্যু: বেশির ভাগের ডায়াবেটিস ছিল

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে যারা মারা গেছেন তাদের অর্ধেকের বেশি মানুষ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2021, 07:19 PM
Updated : 4 Oct 2021, 07:19 PM

মহামারীকালে এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডায়াবেটিস যাদের থাকে তারা দ্রুত আক্রান্ত হয়ে যায়। এ কারণে তাদের মৃত্যুর হার বেশি।

“ডায়াবেটিস সব সময় ইনফেকশন বাড়ায়, তাদের দ্রুত ইনফেকশন হয়। এছাড়া অন্য যেকোনো রোগ থাকলেই শরীরের ইমিউনিটি কমে যায়।”

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় ও শ্বাসকষ্ট হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যাদের ব্লাড প্রেশার থাকে তাদের হার্টে অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সব মিলিয়ে যাদের অন্য মর্বিডিটি থাকে তাদের সিভিয়ারিটি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।”

করোনাভাইরাসে মৃতদের দাফন হচ্ছে রায়েরবাজারের বধ্যভূমি কবরস্থানে। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মৃতদের জন্য প্রার্থনা করতে আসেন স্বজনরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দেশে সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগ বলে আসছে, যারা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত করোনাভাইরাসে তাদের সংক্রমিত হওয়া এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।

সোমবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৮ জন। এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ৫৯১ জনের।

অধিদপ্তর ৩৭তম এপিডেমিওলজিকাল সপ্তাহ থেকে (এ বছরের ১৩ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর) মৃত্যু পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিচ্ছে হেলথ বুলেটিনে।

বুলেটিনে বলা হয়েছে, ৩৯তম এপিডেমিওলজিকাল সপ্তাহে (২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর) ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশেরই কো-মর্বিডিটি ছিল। এর আগের দুই সপ্তাহে এই হার ছিল ৫৮ দশমিক ২ এবং ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে অধিদপ্তর দেখিয়েছে, মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত ছিলেন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে।

এছাড়া বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, কিডনিজনিত রোগ, লিভারের সমস্যা, স্ট্রোক, নানা স্নায়ুবিক রোগ, থাইরয়েডজনিত রোগ, বাতজনিত সমস্যা, রক্তের নানা সমস্যার কারণে সৃষ্ট রোগ, ক্যান্সার ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন অনেকে।

অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, ৩৯তম সপ্তাহে মৃত ১৫৯ জনের মধ্যে কো-মর্বিডিটি ছিল ৮৮ জনের। তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস ছিল ৬২ দশমিক ২ শতাংশের। ৬৭ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচিতে বুধবার বনানীর পল্লীবন্ধু এরশাদ বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা নেয়ার পর কার্ড দেখাচ্ছেন এক দম্পতি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এছাড়া মৃতদের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বক্ষব্যাধী, ১৮ দশমিক ২ শতাংশ হৃদরোগ, ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ কিডনিজনিত রোগ, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ স্ট্রোক, ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ক্যান্সার, ২ দশমিক ৩ শতাংশ স্নায়ু রোগ, ২ দশমিক ৩ শতাংশ থাইরয়েডের সমস্যা এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ বাতজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন।

করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া কতজনের কো-মর্বিডিটি ছিল এবং তাদের কত শতাংশ কোন রোগে আক্রান্ত ছিলেন জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা হিসাব করতে কিছুটা সময় লাগবে।

“আমরা এটা শুরু করেছি যে প্রতি সপ্তাহে মৃত্যু পর্যালোচনাটা দিয়ে দেব। পুরো ডেটা রেডি করতে বলেছি। এটা করতে হয়ত কিছুটা সময় লাগবে, হয়ে গেলে জানিয়ে দেব।”