স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, গত অগাস্ট মাসে যত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে তা পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দুটোই কমেছে প্রায় প্রায় ৮০ শতাংশ।
অগাস্টে মোট ২ লাখ ৫১ হাজার ২৩৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, মারা গিয়েছিল ৫ হাজার ৫১০ জন।
সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কমায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ২৯৩ জন, আর মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩১৫ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। আর প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছিল তার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ।
গত বছরের শেষ দিকটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ডেল্টা সংক্রমণের বিস্তারে এ বছরের এপ্রিল থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে।
এর মধ্যে জুলাই, অগাস্ট ভয়াবহ অবস্থা পার করে বাংলাদেশ।
২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট দুদিনই ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণের গতি কমে আসে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সাড়ে ৫ মাস পর দৈনিক সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামে। তারপর থেকে তা স্থিতিশীলই রয়েছে।
টানা দুই সপ্তাহ দৈনিক সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে ধরে নেন বিশেষজ্ঞরা।
অথচ জুলাইয়ে দৈনিক সংক্রমণের হার ৩২ শতাংশের উপরে উঠেছিল।
গত জুলাই মাসে ৩ লাখ ৩৬ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যা মহামারীর দেড় বছরে যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি।
জুলাই মাসে মৃত্যু হয়েছিল ৬ হাজার ১৮২ জনের, যা গত বছরে মোট মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে সামান্য কম।
গত বছরের মার্চ মাসে প্রাদুর্ভাবের পর সারাবছরে মৃত্যু হয়েছিল ৭ হাজার ৫৫৯ জনের।
২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল জুন মাসে, ৯৮ হাজার ৩৩০ জন। সে মাসে মারা গিয়েছিল ১ হাহার ১৯৭ জন।
গত বছর জুনের চেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছিল জুলাই মাসে, তবে রোগী শনাক্ত হয়েছিল কম। জুলাইয়ে ৯২ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ২৬৪ জনের।
এরপর সংক্রমণের গতি কমতে কমতে এই বছরের জানুয়ারিতে ২১ হাজার রোগী শনাক্ত এবং ৫৬৮ জনের মৃত্যুর তথ্য আসে।
এরপর ফেব্রুয়ারি হয়ে দাঁড়িয়েছিল মহামারীর পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় সবচেয়ে স্বস্তিকর মাস। সে মাসে ১১ হাজার রোগী শনাক্তের বিপরীতে ২৮১ জনের মৃত্যুর খবর আসে।
তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তাভাবনা হলেও ভারতে উদ্ভূত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ দেয় সব ওলটপালট করে।
মার্চ মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়ায়, মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬৮। এরপর এপ্রিলে এক ধাক্কায় দেড় লাখের কাছাকাছি পৌঁছে যায় আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যু বেড়ে যায় চার গুণ।
এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার, মৃত্যু ২ হাজার ৪০০৪। এরপর মে মাসে সংক্রমণের গতি সামান্য কমে সংখ্যা দুটি যথাক্রমে দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৪০৮ ও ১ হাজার ১৬৯।
জুন মাসে আবার লাখ ছাড়িয়ে যায় আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যু পৌঁছায় ২ হাজারের কাছাকাছিতে।
ওই মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮, আর মারা গিয়েছিল ১ হাজার ৮৮৪ জন।
এরপরই আসে ভয়াল জুলাই ও অগাস্ট।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে ৫৮৯ জন রোগী শনাক্ত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৭। আরও ২৪ জনের মৃত্যুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭ হাজার ৫৫৫।
আরও পড়ুন