এবার আলোচনায় কোভিডের নতুন ধরন সি.১.২

ডেল্টার আতঙ্ক না কাটতেই করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন আবার আলোচনা তৈরি করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় গবেষক ও বিজ্ঞানীরা নতুন আরেকটি ধরন খুঁজে পেয়েছেন, যা বিশ্বজুড়ে খবরও হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2021, 07:48 PM
Updated : 2 Sept 2021, 08:09 AM

বেশ কিছুদিন থেকে নজরে রাখা কোভিডের এই ধরন নিয়ে তারা কিছুটা দুশ্চিন্তার মধ্যেও রয়েছেন। কেননা এটি আলফা, বেটা ও গামার মতই ‘মিউটেশনের’ কিছু বৈশিষ্ট্য বহন করছে।

এমনকি এটি অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে দ্বিগুণ ও দ্রুত রূপান্তরিত হয় বলে তা ভয়ংকরও হবে কিনা তা নিয়ে ভাবাচ্ছে গবেষকদের। তবে দ্রুত রূপান্তর হলেও তা ডেল্টার মত বিপদজনক হয়ে ওঠার বিষয়ে এখনও তারা নিশ্চত নন বলে সিএনএন এর প্রতিবেদন বলছে।

সি.১.২ নামের এই ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে আফ্রিকা, এশিয়া ও প্র্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশে বিস্তার লাভ করেছে বলে গবেষকদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

গার্ডিয়ান বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজ এই ধরন নিয়ে সোমবার সতর্ক বার্তা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সব প্রদেশে এই ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, কিন্তু এই হার তুলনামূলক কম।

সি.১.২ গত মে মাসে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে প্রথম চিহ্নিত হয় উল্লেখ করে সতর্ক বার্তায় বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বে এখনও ডেল্টার প্রাধান্য চলছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষকদের একটি দল নতুন এই ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন। এই দলে দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজের ভাইরোলজিস্ট পেনি মুর রয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা এই ধরনের দিকে খেয়াল রাখছেন।

শঙ্কা নিয়েই যুক্তরাজ্যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরছে। ছবি: রয়টার্স

অনলাইনে গবেষণাটির প্রি-প্রিন্টে গবেষক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন এই সার্স-কোভ-২ ভ্যারিয়েন্টটি চিহ্নিত করার পর দেখা গেছে সাধারণভাবে এটি সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন আমরা এই ভাইরাসে আক্রান্তদের অ্যান্টিবডির প্রতি সংবেদনশীলতার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি এবং এটির প্রতিষেধক হিসেবে টিকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হার কম হলেও নতুন এই ধরন গবেষক ও বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, একই ধরনের জেনোমের মধ্যে এর দ্রুত রূপান্তরের বৈশিষ্ট্যের কারণে। এ দিক দিয়ে এটির সঙ্গে ডেল্টার অনেক মিল দেখতে পেয়েছেন তারা।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও ভ্যারিয়েন্টটিকে এত দ্রুত স্বীকৃতি কিংবা আশংকাজনক ধরন হিসেবে এখনও বিবেচনা করছে না বলে গ্রিক বর্ণমালায় এটির নামকরণ করা হয়নি।

সিএনএন বলছে, ডব্লিউএইচও বর্তমানে চারটি ভ্যারিয়েন্টকে শঙ্কার কারণ হিসিবে ঘোষণা করেছে, যেগুলো খুবই দ্রুত সংক্রমিত হয়ে থাকে। একই সঙ্গে এগুলো রোগ হিসেবে বিপদের কারণ ঘটায়। এগুলো হল- আলফা- বি.১.১.৭, বেটা-বি.১.৩৫১, গামা-পি.১ ও ডেল্টা-বি.১.৬১৭.২।

এছাড়া সংস্থাটি নানা ধরনের অসুস্থতার কারণ ঘটানোর কারণে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ইটা-বি.১.৫২৫, লোটা-বি.১.৫২৬, কাপ্পা-বি.১.৬১৭.১ ও ল্যাম্বাডা-সি.৩৭ নামের কোভিড ভাইরাসের নামকরণ করেছে।

ডব্লিউএইচও এর কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি প্রধান মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেন, খুবই কম সংখ্যক মানুষকে সি.১.২ ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে।

এক টুইটে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১০০ জনের মত আক্রান্ত হয়েছেন এবং তা খুব বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। ডব্লিউটিও ওয়েবসাইটে ও সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে নতুন তথ্য পাওয়া গেলে আপডেট জানাবে।“

তাহলে সতর্ক বার্তা কেন

এই বিষয়ে গার্ডিয়ানের প্রশ্নের জবাবে সিডনি ইউনির্ভাসিটির সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল স্কুলের ভাইরোলজিস্ট ও রোগতত্ত্বের লেকচারার ড. মেগান স্টেইন বলেন, এর কারণ সি.১‌.২ এর বিশেষ রূপান্তর বৈশিষ্ট্য।

“এটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিউটেশনের অধিকারী, যা আমরা অন্য ধরনগুলোর মধ্যে দেখেছি যেগুলো ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট অথবা কনসার্ন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

“যে কোনো সময় এসব বিশেষ রূপান্তর শুরু হয় বলে আমরা দেখেছি। এ জন্য এই ভেরিয়েন্টের ওপর নজর রাখতে হবে- সামনে কী হচ্ছে, তা জানতে। এই মিউটেশন ইমিউন রেসপন্সকে ধ্বংস করে কিংবা দ্রুত বদলায় কিনা- এমন বিষয়গুলোর দিকে চোখ রাখতে হবে।“

তিনি আরও বলেন, এটির বিষয়ে জানতে বিজ্ঞানীদের ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষায় হয়ত আরও সময় লাগবে।

টিকা এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে কতটুকু কাজ করবে সে বিষয়ে বলতে গিয়ে নতুন এই ধরন নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, “এখন পর্যন্ত এটির ‘মিউটেশন’ সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে তাতে দেখা গেছে, অন্যান্য ধরন এবং বেটা ও ডেল্টার সঙ্গে এর সাদৃশ্য রয়েছে।

এ কারণে আমরা মনে করছি, সম্ভবত টিকা এটিকে পুরোপুরি ‘কাবু’ করতে পারবে না কিংবা এর প্রধান স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। পরীক্ষা না হওয়ায় এমন বক্তব্য এখন পর্যন্ত অনুমাননির্ভর।“

তবে এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, “টিকার বিষয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে এটি গুরুতর সংক্রশন থেকে যেমন বাঁচায়, তেমনি হাসাপাতালে যাওয়া থেকে রক্ষা করছে কিংবা বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের কারণে মৃত্যু কমাচ্ছে। টিকা সত্যিই অনেকখানি রক্ষা করছে।“

আরও পড়ুন