টিকা নেননি শিক্ষক, খুলেছিলেন মাস্ক, অর্ধেক ক্লাস আক্রান্ত

টিকা না নিলে এবং মাস্ক না পরলে করোনাভাইরাস কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে তার একটি নমুনা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-সিডিসির এক প্রতিবেদনে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2021, 05:57 PM
Updated : 29 August 2021, 05:57 PM

এক প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষক, যার টিকা নেওয়া ছিল না এবং বই থেকে পড়ার জন্য তিনি মাস্ক খুলেছিলেন। এরপর সেই ক্লাসের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী কোভিডে আক্রান্ত হয়।

বিষয়টা সেখানেই থামেনি। সেই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হয়েছে, ভাইরাস পৌঁছে গেছে তাদের পরিবারের সদস্য এবং কমিনিউটির অন্যদের দেহেও।  

গত মে মাসের ওই ঘটনা সম্প্রতি সিডিসিকে এক কেইস স্টাডিতে জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

সিডিসির পরিচালক ডা. রোশেল ভলেনস্কি বলেন, “ছোটা বাচ্চারা, যাদের এখন টিকা দেওয়ার সুযোগ নেই, তাদের সুরক্ষার কীভাবে হেলাফেলা করা হচ্ছে, তার একটি উদাহরণ এটি।”

মৃত্যু ও রোগের বিস্তার নিয়ে সিডিসির সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত ওই কেইস স্টাডিতে বলা হয়, কোভিডের উপসর্গ থাকার পরও মেরিন কাউন্টির ওই শিক্ষক স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন, সেগুলো অ্যালার্জির লক্ষণ।

ওই ক্লাসে থাকা ২২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জনের পরে কোভিড ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে যে দশ জন বসা ছিল, তাদের আট জনেরই কোভিড হয়েছিল।

অথচ কোভিড থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে সব ধরনের নিয়মই ওই স্কুলে জারি ছিল। ক্লাস রুমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মাস্ক পরা ছিল বাধ্যতামূলক। শিক্ষার্থীদের বসানো হয়েছিল ৬ ফুট দূরত্ব রেখে। প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে ছিল পোর্টেবল এয়ার ফিল্টার, দরজা জানালও নিয়ম মাফিক খোলা রাখা হয়েছিল বাতাস চলাচলের জন্য।

সংক্রমিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জেনেছেন, ওই স্কুলে সিডিসির নির্দেশনা অনুসরণ করেই মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্বের সব নিয়ম মানা হয়। কিন্তু যখন জোড়ে পড়ার প্রয়োজন হয়, তখন সেই শিক্ষক কয়েকবার তার মাস্ক খুলেছিলেন বলে তারা বাচ্চাদের কাছে জেনেছেন।

সব মিলিয়ে সেই শিক্ষকসহ স্কুলের মোট ২৭ জন ওই ঘটনায় কোভিডে আক্রান্ত হয়। তবে স্কুলের সবাইকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

টেক্সাসের একটি স্কুলে প্রবেশের আগে মাপা হচ্ছে এক শিশুর তাপমাত্রা। ফাইল ছবি, রয়টার্স।

সিডিসির পরিচালক ডা. রোশেল ভলেনস্কি শুক্রবার হোয়াইট হাউজের কোভিড ব্রিফিংয়ে বলে, “স্কুলে বাচ্চাদের কীভাবে নিরাপদে রাখা সম্ভব তাতো আমরা জানি, সেজন্য যা প্রয়োজন সবাই তো আমাদের আছে।”

মহামারীর মধ্যে স্কুল চালানোর জন্য সিডিসি যে নীতিমালা করেছে, তাতে প্রথমেই টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কিন্তু যেসব টিকা এখনও বাজারে আছে, তার কোনোটিই ১২ বছরের কম বয়সীদের দেওয়া যায় না। সে কারণে সিডিসি বলছে, ওই শিশুদের সুরক্ষার জন্যই শিক্ষকদের সবার টিকা নিতে হবে। 

মেরিন কাউন্টির ডেপুটি হেলথ অফিসার ডা. লিসা স্যান্টোরা সিএনএনকে বলেন, স্থানীয় স্কুলগুলোর সব শিক্ষক যেন টিকা নেন, সেজন্য গত জানুয়ারি থেকে তারা বার বার তাগাদা দিয়ে আসছেন। কিন্তু তারপরও অনেকেই এখনও টিকা নেননি।

“অনেকে হয়ত ভেবেছিলেন, বাচ্চাদের কারণে শিক্ষকরা আক্রান্ত হবেন। কিন্তু আমরা এখন উল্টো ঘটতে দেখলাম।”

ডা. স্যান্টোরা জানান, তার কাউন্টিতে এখন যারা কোভিড নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের ৯০ শতাংশই টিকা নেননি। তাদের অনেকের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। 

“প্রাপ্তবয়স্কদের অনেকেই টিকা না নিয়ে এভাবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন এখনও।”

তার মতে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধ করা কতটা কঠিন হতে পারে, ওই স্কুলের ঘটনাই তার প্রমাণ।

“স্কুলে বাচ্চাদের মধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের কারও কারও বাবা-মাও কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন, যদিও তাদের টিকা দেওয়া ছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যে অন্যরকম, এটা তার আরেকটি প্রমাণ।”