কোভিড: ডেল্টার গতির পর এখন স্থিতিতে বিশ্ব

টিকায় হোক বা অন্য কিছুতে; বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি এখন স্থিতিশীল বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2021, 07:59 PM
Updated : 25 August 2021, 07:59 PM

সংস্থাটি বলেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত দুই মাস ধরে যে গতিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল, অগাস্টের শেষে এসে তা স্থিতিতে দাঁড়িয়েছে।

গত সপ্তাহে বিশ্বে ৪৫ লাখ নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল ৬৮ হাজারের।

এই সংখ্যা তার আগের সপ্তাহের চেয়ে সামান্য বেশি। আগের সপ্তাহে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৪৪ লাখ, মারা গিয়েছিল ৬৮ হাজার।

বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগী বেড়ে হয়েছে ২১ কোটি ৩০ লাখ, আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪৪ লাখ।

ডব্লিউএইচও’র এ সপ্তাহের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে সিএনএন জানিয়েছে, মধ্য জুন থেকে রোগীর সংখ্যা যেভাবে হু হু করে বাড়ছিল, তা এখন স্থিতিশীলই মনে হচ্ছে।

তবে গত মে মাসেও সংক্রমণে এমন স্থিতিশীলতা দেখা গিয়েছিল; এরপর দ্রুত সংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে পরের দুই মাসে চরম বিপর্যয় নেমে আসে বিভিন্ন দেশে, যা বিশ্বে রোগীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।

বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়ার পর যুক্তরাজ্য। ছবি: রয়টার্স

গত সপ্তাহে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে তার পরেই রয়েছে যথাক্রমে ইরান, ভারত, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিল।

আঞ্চলিক হিসাবে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আমেরিকায়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা এক সপ্তাহে বেড়েছে ২০ শতাংশ, আর আমেরিকায় ৮ শতাংশ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির গতি এখন কমতির দিকে। আর অন্য অঞ্চলগুলোতে পরিস্থিতি স্থিতিশীল, অর্থাৎ বাড়েওনি, কমেওনি।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের এই সময়ে মহামারী নিয়ন্ত্রণে টিকাদান বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে ডব্লিউএইচও। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষার মতো বিষয়গুলো ধরে রাখার পরামর্শও দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে মহামারী নিয়ন্ত্রণের বিধি-নিষেধ তোলার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার কথা বলেছে ডব্লিউএইচও।

সংস্থাটি বলেছে, সতর্কতা ও সুবিবেচনার সঙ্গে এসব বিধি-নিষেধ তুলতে হবে। আগে দেখতে হবে, টিকা কত মানুষকে দেওয়া গেল, ডেল্টার সংক্রমণ পরিস্থিতি কী, তারপরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ভারত কি এন্ডেমিক পর্যায়ে?

কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ পেরিয়ে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় থাকা ভারত ‘এন্ডেমিক’র পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে ধারণা করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক ড. সৌম্য স্বামীনাথান।

এন্ডেমিক পর্যায় তখনই বলা হয়, যখন বৃহৎ জনগোষ্ঠী এই জীবাণুর সঙ্গে থেকেই চলতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

আর তা হলে ভারতের ক্ষেত্রে সংক্রমণ খুব না বাড়লেও মোটামুটি কিংবা অল্প মাত্রায় থাকবে, আর তার মধ্য দিয়েই মানুষের জীবনযাত্রা চলবে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মেট্রো স্টেশনেও চলাচল এখন স্বাভাবিক। ছবি: রয়টার্স

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে বিপর্যস্ত করলেও তৃতীয় ঢেউ তেমন হবে না বলেই আশাবাদী দেশটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

দ্য অয়্যারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. স্বামীনাথন বলেন, “আমরা সম্ভবত এন্ডেমিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছি, যেখানে মধ্য ও স্বল্প মাত্রায় সংক্রমণের বিস্তার চলবে। তবে তা তেমন হবে না, যা কয়েক মাস আগে দেখা দিয়েছিল।”

তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আগামীতে সংক্রমণের চিত্র একেক রকম হতে পারে বলে ধারণা তার।

সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্নে ড. স্বামীনাথান বলেন, এটা যে কারও পক্ষেই বলা খুব কঠিন।

“এটা কখন আসবে, তা বলা অসম্ভবই বলব; এটা আদৌ আসবে কি না, সেটা বলাও কঠিন।”

বিশ্বে সংক্রমণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। দেশটিতে এই পর্যন্ত সোয়া ৩ কোটি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার।

ভারতে গত এক দিনে নতুন রোগী সংখ্যা ছিল অর্ধ লক্ষের কম। দেশটিতে ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৩০ কোটির বেশি মানুষ অন্তত একটি ডোজ টিকা পেয়েছেন।    

ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে অনেক বিধি-নিষেধই উঠে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিচ্ছে একেকটি রাজ্য।

শঙ্কা নিয়েই যুক্তরাজ্যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরছে। ছবি: রয়টার্স

ড. স্বামীনাথান মনে করেন, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসে যাবে, তখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ফিরে আসবে।

তবে সারাবিশ্বের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে টিকার বুস্টার ডোজের দিকে না ছোটার জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান রাখেন তিনি।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে শিশুদের সংক্রমণ বাড়লেও তাতে উদ্বিগ্ন না হতে বাবা-মাদের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক।

তিনি বলেন, “আমরা গবেষণায় দেখেছি, শিশুরা আক্রান্ত হয়, শিশুদের মধ্য দিয়ে ভাইরাস ছড়ায়, কিন্তু তাদের অসুস্থ হওয়ার হার খুবই কম। সৌভাগ্যবশত তারা অসুস্থ হলেও উপসর্গ থাকে মৃদু, অল্প কিছু গুরুতর অসুস্থ হয়। আর তার মধ্যে যত সংখ্যক মারা যায়, তা প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় নগণ্য।”