কোভিড: শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের নিচে নামল

দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার তুলনায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ১৫ শতাংশের নিচে নেমেছে দশ সপ্তাহ পর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2021, 12:07 PM
Updated : 26 August 2021, 11:09 AM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৩৩ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে দেশে ৪ হাজার ৯৬৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১১৪ জনের।

তাতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়াচ্ছে ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ১৫ জুনের পর সর্বনিম্ন।

সেদিন সোয়া ২৩ হাজার জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৩১৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুলাই মাসের বেশিরভাগ সময় এই হার ৩০ শতাংশের আশেপাশে ছিল।

সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩০ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হল; তাদের মধ্যে ২৫ হাজার ৬২৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ২৪৯ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল। আর মৃত্যু হয়েছিল ১১৪ জনের।

সেই হিসেবে গত এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও মৃত্যুর সংখ্যায় হেরফের হয়নি। এক দিনে মৃত্যুর এই সংখ্যা গত ২৯ জুনের এর চেয়ে সবচেয়ে কম। সেদিন মোট ১১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল।

গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ২ হাজার ৭২৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আগের দিন এ বিভাগে ২ হাজার ৯৬০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

যে ১১৪ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৩৪ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন আরও ৭ হাজার ৮০৮ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠলেন ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫৭১ জন।           

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ৬৩ হাজার ৭৩২ জন, যা আগের দিন ৬৫ হাজার ৬৮৮ জন ছিল। জুলাইয়ে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিল দেড় লাখও ছাড়িয়েছিল।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২০ অগাস্ট তা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২১ কোটি ৩০ লাখের বেশি রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৩৩ হাজার ৬৪০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫৪টি নমুনা।

নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৩২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে ১২৭ জন, মুন্সিগঞ্জে ১২৮ এবং নারায়ণগঞ্জে ১০২ জন, নরসিংদীতে ১২৬ জন এবং শরীয়তপুরে ১০৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ২৯২ জন, কুমিল্লায় ১৫৫ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১৬০ জন এবং সিলেটে ১৩৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।

ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৬ জন, অর্থাৎ, প্রায় অর্ধেক ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ২৯ জনের মধ্যে ৭ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

এছাড়া খুলনা বিভাগে ১৩ জন, সিলেট বিভাগে ৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।

মৃত ১১৪ জনের মধ্যে ৭০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, আর ২ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

মৃতদের মধ্যে ৬২ জন ছিল পুরুষ, ৫২ জন নারী। তাদের ৯২ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৫ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৭ জন বাসায় মারা যান।