মহামারীর শুরু থেকে রয়টার্স নিয়মিত যে টালি নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে, তাতে বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা দুঃখজনক এই মাইলফলক পেরিয়ে যায়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে নতুন এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম খবর আসে। এরপর সেই ভাইরাস দ্রুত পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তে পৌঁছে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহামারী ঘোষণা করে। ওই বছর ২৮ জুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটিতে পৌঁছায়।
এক বছরের কিছু সময় পর চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ কোটির ঘর ছড়িয়ে যায়। তা দ্বিগুণ হতে সময় লাগল ছয় মাসের সামান্য বেশি।
গত ১৭ জুলাই বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৯ কোটিতে পৌঁছেছিল। তার সঙ্গে আরও এক কোটি যুক্ত হল মাত্র ১৬ দিনে।
রয়টার্স লিখেছে, বিশ্বজুড়ে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার মধ্য দিয়ে ধনী ও গরিব দেশগুলোর মধ্যে টিকাদানে পার্থক্যই আরও স্পষ্ট হল।
বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ দেশে এখন আবার সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। এসব দেশের বেশিরভাগই তাদের অর্ধেক নাগরিককে টিকার প্রথম ডোজ দিতে পারেনি এখনও।
বিশ্বের সব দেশ তাদের জনসংখ্যার অন্তত ১০ শতাংশকে টিকা দিতে না পারা পর্যন্ত ধনী দেশগুলোতে টিকার বাড়তি বুস্টার ডোজ দেওয়া স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জাতিসংঘের এ সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বুধবার বলেছেন, “বেশিরভাগ টিকা চলে যাচ্ছে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে, এই গতিপথ আমাদের যত দ্রুত সম্ভব উল্টে দেওয়া দরকার। বেশিরভাগ টিকা নিম্ন আয়ের দেশেই যাওয়া উচিত।”
ভারতে প্রথমে পাওয়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আগের ধরনগুলোর চেয়ে কেবল দ্রুতই ছড়াচ্ছে না, টিকা পাওয়া লোকজনকেও আক্রান্ত করছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে অসুস্থতার মাত্রাও আগের তুলনায় বেশি হচ্ছে, বিশেষ করে যারা টিকা পায়নি, তাদের ক্ষেত্রে।
মহামারী শুরুর পর গত দেড় বছরে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অন্তত ২.৬ শতাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তবে বহু দেশে পরীক্ষার পর্যন্ত সুযোগ এখনও তৈরি না হওয়ায় শনাক্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা অনেকি বেশি হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
মোট শনাক্ত রোগীর তালিকায় আগের মতই শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বে কোভিডে আক্রান্ত প্রতি সাতজনের মধ্যে একজনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সেখানে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ৫২ লাখের বেশি রোগী, মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষের।
শনাক্ত রোগীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ১৭ লাখ মানুষের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সেখানে মৃত্যু হয়েছে সোয়া চার লাখ মানুষের, যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
মৃতের সংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। সেখানে ৫ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে; শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ কোভিড রোগী, যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
রয়টার্সের টালি বলছে, বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত ৪৪ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।
তবে ডেল্টা ধরনের প্রকোপে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত গতিতে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ এশিয়ার ওই অংশে বসবাস করেন। কিন্তু দিনের মোট শনাক্ত রোগীর ১৫ শতাংশই থাকছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার।
জুলাই মাসে ভয়াবহ সংক্রমণের কবলে পড়া ইন্দোনেশিয়ায় এখন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটছে। বিশ্বে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটির খবর আসছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। সেখানে কোভিডে মৃত্যুর মোট সংখ্যা বুধবারই এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
এপ্রিল-মে মাসে ভয়াবহ দুঃসময় পার করে আসা ভারতেও নতুন রোগীর সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের প্রথম সামাজিক সংক্রমণ ধরা পড়েছে চীনের উহানে, যেখান থেকে করোনাভাইরাসের আদি ধরনটি পুরো বিশ্বে ছড়িয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ডেল্টার বিস্তার ঠেকাতে চীনের উহান শহরের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।