কোভিড: দেশে শনাক্ত রোগী ১৩ লাখ ছাড়াল

সাত দিনে আরও এক লাখ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2021, 11:45 AM
Updated : 4 August 2021, 12:26 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ হাজার ৮১৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাতে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ লাখ ৯ হাজার ৯১০ জনে।   

দেশে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২১ হাজার ৬৩৮ জনের পৌঁছেছে।

আগের দিন মঙ্গলবার সারা দেশে ৫৫ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়। আর এক দিনে মৃত্যু হয় ২৩৫ জনের। সেই হিসেবে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সখ্যা কিছুটা কমে এলেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।

গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৫ হাজার ৭১৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের ৪১ শতাংশের বেশি।

আর এই সময়ে যে ২৪১ জন মারা গেছেন, তাদের ৯৩ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৮ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৬ হাজার ১১২ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১১ লাখ ৪১ হাজার ১৫৭ জন।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪২ লাখ ৪২          হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৯৩ লাখের বেশি রোগী।

বাংলাদেশ গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক  লাখ ছাড়ায় গত বছরের ১৮ জুন।

এক মাসের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মোট শনাক্ত দুই লাখ ছাড়ায় গত বছরের ১৮ জুলাই।

এরপর ২৬ অগাস্ট তিন লাখ, ২৬ অক্টোবর ৪ লাখ, ২০ ডিসেম্বর ৫ লাখ, ২৯ মার্চ ৬ লাখের ঘর ছাড়ায় করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা।

এরপর সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৪ এপ্রিল ৭ লাখ, ৩১ মে  ৮ লাখ, ২৯ জুন ৯ লাখ ছাড়ানোর পর দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯ জুলাই ১০ লাখের মাইল ফলকও ছাড়িয়ে যায়।

নয় দিন পর ১৮ জুলাই সেই সংখ্যা পৌঁছায় ১১ লাখে। তা ১২ লাখে পৌঁছায় ২৮ জুলাই। সেদিনই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

১২ লাখ থেকে মোট শনাক্ত রোগী ১৩ লাখে পৌঁছাতে সময় নিল মাত্র সাত দিন। এত কময় সময়ে এক লাখ কোভিড রোগী আগে কখনও শনাক্ত হয়নি।

দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২ অগাস্ট তা ২১ হাজার ছাড়ায়। তার আগে ২৭ জুলাই রেকর্ড ২৫৮ জনের মৃত্যুর খবর আসে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৪৯ হাজার ৫১৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮৩টি নমুনা।

নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা আগেরদিন ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ ছিল।

গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১০৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৭৬ জন, গাজীপুরে ২৩৪ জন,গোপালগঞ্জে ১১০ জন, কিশোরগঞ্জে ১৫৮ জন, মানিকগঞ্জে ১৭৭ জন এবং নরসিংদীতে ২২৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১২৮৫ জন, কক্সবাজারে ২৩২ জন, ফেনীতে ১০৪ জন, নোয়াখালীতে ২২৯ জন, লক্ষ্মীপুরে ১৩৮ চাঁদপুরে ৩৩৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪১৩ জন এবং কুমিল্লায় ১১৯০ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৪২ জন, নাটোরে ১৪৬ জন, পাবনায় ১২২ জন এবং সিরাজগঞ্জে ১৩৫ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে।

খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরে ১৫০ জন, খুলনায় ১০৩ জন এবং কুষ্টিয়ায় ১৪৩ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।

অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৮০ জন, বরিশালে ৩৩৭ জন, ভোলায় ১৮২ জন, সিলেটে ৪৫৪ জন, মৌলভীবাজারে ১২৬ জন এবং রংপুরে ১৬৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৪০ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৬৮ জন জনের মধ্যে ১৭ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

এছাড়া খুলনা বিভাগে ৩৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২ জন, বরিশাল বিভাগে ৫ জন, সিলেট বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ১৫ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।

মৃত ২৪১ জনের মধ্যে ২ জনের বয়স ছিল একশ বছরের বেশি। এছাড়া ১৩২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৫৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ২২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৫ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

তাদের মধ্যে ১২৫ জন ছিলেন পুরুষ, ১১৬ জন ছিলেন নারী। ১৮৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৮ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একজনকে হাসপাতালে মৃত নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।