কোভিড: দৈনিক শনাক্ত ৯ হাজারের নিচে নামল, মৃত্যু ফের ২ শতাধিক

দেশে পাঁচ দিন পর ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১২ হাজারের নিচে নামল। তবে মৃত্যু আগের দিনের চেয়ে আবার বেড়ে ২০০ ছাড়িয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2021, 11:37 AM
Updated : 18 July 2021, 05:33 AM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৯ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৮ হাজার ৪৮৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০৪ জনের।

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের স্থানীয় সংক্রমণে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত পাঁচ দিন ধরে দৈনিক শনাক্ত রোগী ১২ হাজারের উপরে ছিল। এর মধ্যে ১২ জুলাই ১৩ হাজার ৭৬৮ রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়।

শুক্রবারও প্রায় ৪২ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১২ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

শুক্রবারের আগে পাঁচ দিন দৈনিক ২ শতাধিক মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে গত ১১ জুলাই সর্বাধিক ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। শুক্রবার সংখ্যাটি দুইশর নিচে নামলেও শনিবার তা আবার বাড়ল।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯২ হাজার ৪১১ জনে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৬৬৯।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৮ হাজার ৮২০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ২৩ হাজার ১৬৩ জন।

গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষা প্রায় ১৩ হাজার কমে যাওয়ার মধ্যে শনাক্তের হার বেড়ে আবার ২৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। শুক্রবার তা ছিল ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বৃহস্পতিবার ছিল ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ; তাতে শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। মৃত্যুর হার প্রায় ১৬ শতাংশ বাড়ার সঙ্গে সুস্থতার হারও বেড়েছে ৪১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬২৭টি ল্যাবে ২৯ হাজার ২১৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭২ লাখ ১৫ হাজার ৫৮১টি নমুনা।

অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে এ মুহূর্তে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ৯ জুলাই দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে যায়, আর ১৪ জুলাই মোট মৃত্যু ছাড়ায় ১৭ হাজার।

সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন চলছিল দেশে। কোরবানির ঈদের জন্য তা ১৫ জুলাই শিথিল করা হয়।

এর ফলে সংক্রমণ বেড়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করে এলেও শকডাউন শিথিলের দ্বিতীয় দিনে এসে রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৩ হাজারের মতো কমে গেল।

গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজার ৪৮০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৫০ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৮৫ জন।

যে ২০৪ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৮২ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে ৪৯ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ২৭১ জন, ফরিদপুরে ৩০৫ জন, গাজীপুরে ১৩৮ জন, মুন্সীগঞ্জে ৯৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০৯ জন, নরসিংদীতে ৬৪ জন, রাজবাড়ীতে ১৩৮ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ৯২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৬০০ জন, কক্সবাজারে ২৪১, ফেনীতে ৮৯ জন, নোয়াখালীতে ১৫৭ জন, চাঁদপুরে ১১৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭৮ জন এবং কুমিল্লায় ৪৭৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৬৩ জন, পাবনায় ১৫৫ জন, সিরাজগঞ্জে ৬২ জন এবং বগুড়ায় ১৫৬ জন নতুন রোগী মিলেছে।

খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় ৪৪ জন, যশোরে ১০৮ জন, খুলনায় ২০১ জন এবং কুষ্টিয়ায় ৮৮ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ।

এছাড়া অন্য বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে বরিশালে ১০৪ জন, ময়মনসিংহে ১০৮ জন, সিলেটে ২০৩ জন, রংপুরে ১০৮ জন এবং দিনাজপুরে ১৭১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩২ জন ঢাকা জেলার।

খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫২ জনের মধ্যে ১০ জন করে মোট ২০ জন যশোর ও কুষ্টিয়া এবং ৯ জন খুলনা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৩২ জনের মধ্যে ১৫ জন কুমিল্লা জেলার।

এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২০ জন, বরিশাল বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

মৃত ২০৪ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স ছিল ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে। ১৫ জনের বয়স ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে, ৩৫ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ৫১ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৫৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

মৃত ২০৪ জনের মধ্যে ১২৫ জন পুরুষ এবং ৭৯ জন ছিলেন নারী।