পাঁচ দিনে হাজার মৃত্যু, কোভিডে ঝরে গেল ১৭ হাজার প্রাণ

এক দিনে আরও ২১০ জনের মৃত্যুতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সতের হাজার পেরিয়ে গেল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2021, 11:45 AM
Updated : 14 July 2021, 01:02 PM

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের মধ্যেই গত ৯ জুলাই বাংলাদেশে মোট মৃত্যু পৌঁছেছিল ১৬ হাজারে। সেই তালিকায় আরও এক হাজার নাম যুক্ত হতে সময় লাগল মাত্র পাঁচ দিন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১২ হাজার ৩৮৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; তাতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩৮ জন।

আর গত এক দিনে মারা যাওয়া ২১০ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট মৃত্যু পৌঁছালো ১৭ হাজার ৫২ জনে।

টানা রেকর্ডের পর মঙ্গলবার দেশে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছু কমে এসেছিল। এক দিনে ১২ হাজার ১৯৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল ২০৩ জনের। বুধবার তা আবার কিছুটা বেড়েছে।

গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৫ হাজার ৫৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪৭০ জন।

আর যে ২১০ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৯ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৮ হাজার ২৪৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৪১২ জন।

বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ৭৯ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৪০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে।

 

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ৯ জুলাই দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে যায়, সেদিনই মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়ায়।

এর মধ্যে ১১ জুলাই রেকর্ড ২৩০ জনের মৃত্যুর খবর আসে, পরদিন ১৩ হাজার ৭৬৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

প্রথম মৃত্যুর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ায়। এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ছাড়ায় মৃতের সংখ্যা।

এরপর কমে আসে দৈনিক মৃত্যু। ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজারের ঘর ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজার এবং ৩১ মার্চ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়ায়।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ১৫ দিনেই এক হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটে, গত ১৫ এপ্রিল মৃতের মোট সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

এর পরের এক হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটাতে আরও কম, মাত্র দশ দিন সময় নেয় করোনাভাইরাস; মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ২৫ এপ্রিল।

তার ১৬ দিন পর ১১ মে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এক মাসের মাথায় ১১  জুন তা পৌঁছায় ১৩ হাজারে।

আরও ১৫ দিন পর ২৬ জন মৃতের মোট সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়ায়। আট দিনে আরও এক হাজার মানুষের মৃত্যুতে ৪ জুলাই সেই সংখ্যা ১৫ হাজারে যায়। পাঁচ দিনের মাথায় ৯ জুলাই তা ১৬ হাজারে পৌঁছায়।

এর পর শেষ পাঁচ দিনে আরও এক হাজার মৃত্যুতে দেশে মৃতের মোট সংখ্যা বুধবার ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেল।   

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬২৭টি ল্যাবে ৪২ হাজার ৪৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৯টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, আগের দিন যা ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল।

দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ৪৯৬ জন, ফরিদপুরে ১০৫ জন, গাজীপুরে ২৫৬ জন, কিশোরগঞ্জে ১০৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৩৯ জন, টাঙ্গাইল জেলায় ২০৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১০০৩ জন, কক্সবাজারে ২২৩ জন, ফেনীতে ১৬৯ জন, নোয়াখালীতে ২০৩ জন, চাঁদপুরে ১২৫ জন এবং কুমিল্লায় ৫৪৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৭৭ জন, নাটোরে ১১০ জন, পাবনায় ৩৭৬ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩৮ জন এবং বগুড়ায় ১৯২ জন নতুন রোগী মিলেছে।

খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে ১৫৫ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১১১ জন, যশোরে ২২৭ জন, খুলনায় ৩৭৫ জন, কুষ্টিয়ায় ৩২৫ জন এবং মেহেরপুরে ১৬৪ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ।

অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে রংপুর জেলায় ১২১ জন, দিনাজপুর জেলায় ১৩৮ জন, সিলেট জেলায় ২৬৯ জন, বরিশাল জেলায় ২০২ জন, ঝালকাঠি জেলায় ১২৭ জন এবং ময়মনসিংহ জেলায় ২৮৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩১ জন ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ১২ জন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ জন, রংপুর বিভাগে ১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ জন এবং সিলেট বিভাগে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

মৃত ২১০ জনের মধ্যে ১০৭ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৫২ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৯ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

তাদের ১৩১ জন ছিলেন পুরুষ, ৭৯ জন ছিলেন নারী। ১৫৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪০ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।