কোভিড: একদিনে রেকর্ড ১৩৭৬৮ রোগী শনাক্ত, ২২০ মৃত্যু

করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাফে সাড়ে ১৩ হাজারের ঘরও ছাড়িয়ে গেল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2021, 11:49 AM
Updated : 12 July 2021, 12:57 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৪ হাজার নমুন পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২২০ জনের।

ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

আগের দিন রোববার সারা দেশে রেকর্ড ১১ হাজার ৮৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং ২৩০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্যা অধিদপ্তর। পরদিন মৃত্যুর সংখ্যা দশজন কমলেও এক দিনেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে দুই হাজারের কাছাকাছি। 

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ জনে। তাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৬৩৯ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে।

গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৬৪১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। চট্টগ্রাম বিভাগেও এক দিনে শনাক্ত রোগী দুই হাজার ছাড়িয়েছে।

আর যে ২২০ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৪ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৭ হাজার ২০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২১ জন।

গত ৬ থেকে ৯ জুলাই টানা চারদিন দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজারের ওপরে। মাঝখানে ১০ জুলাই তা কমে আট হাজারের ঘরে থাকলেও পরদিনই ১১ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। সোমবার তা আরও বেড়ে সাড়ে ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল। 

গত ২৭ জুন থেকে টানা ১৬ দিন ধরে একশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনাভাইরাসে। এরমধ্যে ৭ জুলাই তা প্রথমবারের মত ২০০ ছাড়ায় এবং ১১ জুলাই ২৩০ মৃত্যুর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬২৭টি ল্যাবে ৪৪ হাজার ৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭০ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ,আগেরদিন যা ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ ছিল।

দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

 

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৫ হাজার ২ জন, ফরিদপুরে ১৫১ জন, গাজীপুরে ১৯৭ জন, কিশোরগঞ্জে ১০০ জন, নারায়ণগঞ্জে ২১০ জন, রাজবাড়ীতে ১৩৮ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ২০৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৮২১ জন, কক্সবাজারে ২২৩ জন, ফেনীতে ১৫২ জন, নোয়াখালীতে ২৩৬ জন, চাঁদপুরে ১১০ জন, কুমিল্লায় ৪৫১ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩০৪ জন, নাটোরে ১১৪ জন, পাবনায় ২২২ জন, সিরাজগঞ্জে ২৫২ জন এবং বগুড়ায় ৩২৭ জন নতুন রোগী মিলেছে।

খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে ১৯৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১২৮ জন, যশোরে ৩১১ জন, খুলনায় ৩৪২ জন,কুষ্টিয়ায় ২৭৭ জন এবং সাতক্ষীরায় ১১৬ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ।

রংপুর বিভাগের রংপুরে ১১৬ জন,ঠাকুরগাঁওয়ে ১০১ জন এবং দিনাজপুরে ১০৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৬১ জন, বরিশাল জেলায় ২১৬ জন, ঝালকাঠি জেলায় ১১৩ জন এবং ময়মনসিংহ জেলায় ২৬৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৪ জন ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ১৫ জন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩ জন, বরিশাল বিভাগে ৪ জন, রংপুর বিভাগে ১৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

মৃত ২২০ জনের মধ্যে ১২১ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৬ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

তাদের ১৪২ জন ছিলেন পুরুষ, ৭৮ জন ছিলেন নারী। ১৬৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪০ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৩জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ৯ জুলাই দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে যায়, সেদিনই মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়ায়।

বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ৬৭ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৪০ লাখ ২৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে।