করোনাভাইরাস: আরও ১৩২ মৃত্যু, শনাক্ত বেড়ে ৮৪৮৩

দেশে টানা তৃতীয় দিনের মত ২৪ ঘণ্টায় আট হাজারের বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, ষষ্ঠ দিনের মত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2021, 12:35 PM
Updated : 3 July 2021, 11:11 AM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত এক দিনে আরও ৮ হাজার ৪৮৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৩২ জনের।

প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে লকডাউনের বিধিনিষেধ। বৃহস্পতিবার সারা দিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি, তাতে শনাক্তের হার বেড়ে ২৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার ১৪৩ জনের রেকর্ড মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুক্রবার তার চেয়ে ১১ জন কম মারা যাওয়ার খবর এলেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ৮ হাজার ৩০১ জন থেকে বেড়ে গেছে।

কেবল ঢাকা বিভাগেই গত এক দিনে ৩৮৪১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৪৫ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম আর খুলনাতেও হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে কেবল খুলনা বিভাগেই মারা গেছেন ৩৫ জন; ঢাকা বিভাগে ৩০ জনের প্রাণ নিয়েছে এ ভাইরাস।

গত একদিনে মারা যাওয়া ১৩২ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৭৮ জনে দাঁড়াল। আর এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৯ লাখ ৩০ হাজার ৪২ জনে।

সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৪ হাজার ৫০৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২৫ হাজার ৪২২ জন।

গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৩ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। খুলনায় মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ৯ জনই ছিলেন খুলনা জেলার বাসিন্দা।

এছাড়া চট্গ্রাম বিভাগে ২৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৪ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।

এই ১৩২ জনের মধ্যে ৬৭ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৩০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২০ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং  ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

তাদের ৮১ জন ছিলেন পুরুষ, ৫১ জন ছিলেন নারী। ৯৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ২০ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৩৮৪১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ বিভাগের টাঙ্গাইলে ২৩৫ জন, ফরিদপুরে ১৮৪ জন, রাজবাড়ীতে ১৭০ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ১০৯ জনের দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে পাবনায় ২৪৪ জন, রাজশাহী জেলায় ২৪১ জন ও বগুড়ায় ১০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

রংপুর বিভাগের মধ্যে রংপুর জেলায় ২৭২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২৫ জন দিনাজপুরে ১০৩ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় আরও ৪২১ জন, কুমিল্লায় ১৮৭ জনও নোয়াখালীতে ১৩৪ জন শনাক্ত হয়েছে।

খুলনা বিভাগের যশোরে ২৮০ জন, খুলনা জেলায় ২২৩ জন, কুষ্টিয়ায় ১৩৭ জন এবং ঝিনাইদহে ১৩২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

এছাড়া সিলেট জেলায় ২১৫ জন, ময়মনসিংহ জেলায় ১৪৭ জন এবং বরিশাল জেলায় ১১১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে। 

বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের ৩৩৭৬ জন থেকে বেড়ে ৩৮৪১ জন এবং রংপুর বিভাগে ৪৬৫ জন থেকে বেড়ে ৭১৫ জন হয়েছে।

তবে চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ১১৭১ জন থেকে কমে ১০৫৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২৭৯ থেকে কমে ৮৫১ জন আর খুলনা বিভাগে ১২৪৫ জন থেকে কমে ১২০১ জন হয়েছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৬৬টি ল্যাবে ৩০ হাজার ১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৮২টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ যা আগের দিন ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ ছিল।

দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ঢাকা জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার আগের দিনের ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং বিভাগে ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫ দশমিক ৬৯ জন হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২৪ দশমিক ০৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ৩৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৮ দশমিক ১৮ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের হার।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনে রেকর্ড ৮ হাজার ৮২২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ২৬ জুন তা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১ জুলাই রেকর্ড ১৪৩ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ২৭ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি মানুষের।