কোভিড: দেশে এপ্রিলের পর ভয়াল ছিল জুন

করোনাভাইরাস মহামারীতে সদ্য পেরিয়ে আসা জুন মাসে অনেক রেকর্ড হলেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসেবে এখন পর্যন্ত গত এপ্রিলেই ভয়াবহতা ছিল সবচেয়ে বেশি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2021, 06:24 PM
Updated : 2 July 2021, 03:03 AM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে বৃহস্পতিবার যে মাসওয়ারি হিসাব দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যায়, মহামারীতে এক মাসে সর্বাধিক ২ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এপ্রিলে। এক মাসে সর্বাধিক ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ জন রোগীও শনাক্ত হয়েছিল ওই মাসে।

ভারতে উদ্ভূত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে গত মার্চ মাস থেকেই শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এপ্রিলে তা অনেক বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত জুনে ১ হাজার ৮৮৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। মহামারীর ১৬ মাসে এখন পর্যন্ত এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা।

 

রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে জুন দ্বিতীয় স্থানে। এই মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এপ্রিলের পর সবচেয়ে বেশি।

মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের জুন মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৯৮ হাজার ৩৩০ জন। আর মারা গিয়েছিল ১ হাজার ১৯৭ জন।

রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু এপ্রিলে বেশি হলেও দৈনিক রোগী শনাক্ত, দৈনিক নমুনা সংগ্রহ, দৈনিক নমুনা পরীক্ষা সবগুলো ক্ষেত্রেই রেকর্ড হয়েছে জুন মাসে। আর তিনটিই হয়েছে ৩০ জুন।

ওই দিন ৩৭ হাজার ৮৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ৫৬৫টি ল্যাবে ৩৫ হাজার ১০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ হাজার ৮২২ জনের শরীরে।

কোভিড-১৯ থেকে এক দিনে সুস্থ হওয়ায় ক্ষেত্রেও রেকর্ডটি হয়েছে জুন মাসে। ১৫ জুন ১৫ হাজার ২৯৭ জন সুস্থ হয়, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বাধিক।

পুরো জুন মাসজুড়ে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তাতে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে।

 

এর আগে গত এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি ৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২৮টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ জন।

গত বছর জুনের পর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমলেও এবার জুলাই শুরু হয়েছে রেকর্ড মৃত্যু দিয়ে।

২৭ জুন ১১৯ জনের মৃত্যু ছাপিয়ে ১ জুলাই ১৪৩ জন মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক দিনে এত কোভিড রোগীর মৃত্যু আগে ঘটেনি। এদিন শনাক্তের সংখ্যাও ছিল ৮ হাজারের উপর।

এই পরিস্থিতিতে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সামনে আরও বাড়তে পারে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের গ্রাফ এখন ঊর্ধ্বমুখী। আগামী সাত থেকে ১০ দিন সংক্রমণ বাড়তে থাকবে।

“সংক্রমণ যদি বাড়তে থাকে, আনুপাতিক হারে মৃত্যুও বাড়ে। এখন মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। যদি শনাক্ত হয় ১০ হাজার হয়, সেই হারে মৃত্যু হবে ১৬০ জনের।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথম দিনের কঠোর লকডাউনে বৃহস্পতিবার দুপুরের চট্টগ্রাম আখতারুজ্জামান উড়াল সড়কের চিত্র। ছবি: সুমন বাবু

মৃত্যুর এই রেকর্ডের দিনই সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। গণপরিবহন, অফিস-আদালত সব বন্ধ করা হয়েছে এক সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে গণটিকাদানও ফের শুরু হয়েছে।

ডা. মুশতাক বলেন, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নিম্নগামী হবে, যদি চলমান লকডাউন আরও কয়েকদিন চলমান থাকে।

তার পরামর্শ, “মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে আগামী অন্তত দুই সপ্তাহ। এরমধ্যে যারা শনাক্ত হচ্ছে, তাদের প্রত্যেককে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। মৃদু লক্ষণযুক্ত যারা হাসপাতালে যাচ্ছেন না, তাদের টেলিমেডিসিনের আওতায় আনতে হবে।”

তাহলে দুই সপ্তাহের মাথায় সংক্রমণের গতি নিম্নগামী হবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।