‘কম-কভ’ নামের ট্রায়ালে ফাইজার কিংবা
অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ করে কিংবা একটির পর অন্যটির প্রয়োগ করে মহামারী নিয়ে
আসা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা দেখা হয়। প্রতিটি মিশ্রণেই ভালো ফল
এসেছে, বিশেষ করে অ্যান্টিবডি তৈরিতে।
গবেষণার এই ফলে
আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, টিকা নিয়ে চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিতে
পারে।
আরেকটি চমকপ্রদ বিষয়ও
এসেছে গবেষণায়। ট্রায়ালে দেখা গেছে, যারা ইতিমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ টিকা
নিয়েছেন, তারা শরতে তৃতীয় অর্থাৎ বুস্টার ডোজ হিসেবে অন্য আরেকটি টিকা দিলে শক্তিশালী
রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের
উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অধ্যাপক জনাথন ভ্যান-তাম বলেছেন, এখন যেভাবে একই
টিকার ডোজ দেওয়া হচ্ছে সেটা এই মুহূর্তে বদলানোর কোনো কারণ নেই। তাছাড়া টিকার
যথেষ্ট সরবরাহ যেমন আছে, তেমনি মানুষের জীবনও রক্ষা পাচ্ছে।
তবে তিনি বলেন,
“টিকার এই মিশ্র ডোজ আমাদেরকে বুস্টার কর্মসূচিতে বড় ধরনের স্বস্তি দিতে পারে।
এছাড়া যেসব দেশে টিকাদান কর্মসূচি আরও বাড়ানো দরকার কিংবা যাদের টিকার ঘাটতি আছে,
তারাও এতে উপকৃত হবে।
এরই মধ্যে কিছু দেশে
টিকার মিশ্র ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। স্পেন এবং জার্মানিতে তরুণ যারা প্রথম হিসেবে
অ্যাস্ট্রজেনেকতার টিকা নিয়েছেন, তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজার অথবা মডার্নার
এমআরএনএ টিকা নিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
টিকা প্রয়োগে রক্ত
জমাট বাধার বিষয়টি বিরল হলেও এটি যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। এক্ষেত্রে যা জানা থাকা
দরকার তা হচ্ছে, প্রথমত পূর্ণ সুরক্ষার জন্য টিকার দুই ডোজ নেওয়াটা জরুরি। এতে
কোভিড আটকানো কিংবা এই ভাইরাস ধ্বংস করার মতো অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল তৈরি করতে
সক্ষম হয় শরীর।
চার সপ্তাহের মধ্যে
৫০ কিংবা তদূর্ধ্ব ৮৫০ জন স্বেচ্ছসেবীকে টিকার মিশ্র ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ‘কম-কভ’
ট্রায়ালটি চালানো হয়।
এতে দেখা গেছে,
ফাইজারের পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার চেয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার পর ফাইজারের টিকা প্রয়োগে
সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল তৈরি হয়েছে।
আবার
অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজের চেয়ে ওই দুই ডোজের মিশ্রণ সর্বোচ্চ অ্যান্টিবডি
করেছে।
এছাড়া ফাইজারের দুই
ডোজ প্রয়োগে বেশি অ্যান্টিবডি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার পর ফাইজারের টিকা ডোজ প্রয়োগে
টি-সেল তৈরি হয়েছে বেশি।
প্রধান গবেষক অক্সফোর্ডের অধ্যাপক ম্যাথিউ
স্ন্যাপ বলেছেন, যুক্তরাজ্যে এখন যেভাবে একজনকে একই টিকার দুটি করে ডোজ দেওয়া
হচ্ছে, গবেষণার ফল সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে না।
“আমরা জানি, এখন যেভাবে আট থেকে ১২ সপ্তাহের
ব্যবধানে টিকার দুই ডোজ করে দেওয়া হচ্ছে তা মারাত্মক অসুস্থতা, হাসপাতালে যাওয়া,
এমনকি ডেল্টাসহ ভাইরাসের ধরণগুলোর বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর হয়েছে।”
তার মতে, মিশ্র ডোজও যে কার্যকর হতে পারে সেটাই
উঠে এসেছে গবেষণায়। এমনকি দুই ডোজের মধ্যে চার সপ্তাহের ব্যবধানেও।
১২ সপ্তাহের ব্যবধানে মিশ্র দুই ডোজ টিকা
প্রয়োগের ফলাফল আগামী মাসে প্রকাশ করা হবে।
এদিকে সোমবার আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে,
অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের ছয় মাসের বেশি সময় পর তুতীয় ডোজ প্রয়োগেও রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর শীতের আগে
বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করা প্রয়োজন কিনা তা এতো আগেই বোঝা সম্ভব নয়। এই সময়ের মধ্যে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা নষ্ট হয় তাও পরিষ্কার নয়।
ইউভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার অধ্যাপক পল
হান্টার বলেন, “এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে এই শরতে আমরা বুস্টার টিকা দেব কিনা।
এই গবেষণা এবং অন্যান্য উৎস থেকে আমরা যেসব তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি, তাতে যারা বয়স এবং
অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে তাদের জন্য এটা
(বুস্টার) দরকার হবে।”
কম-কভ ট্রায়ালে পাওয়া তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে তার
পরামর্শ হচ্ছে, যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ
হিসেবে ফাইজারের টিকা দেওয়া উচিত। আর যারা ফাইজারের প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের শরতে
আর বুস্টার নেওয়ার দরকার নাও হতে পারে।
গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে বুস্টার ডোজ নিয়ে
উৎসাহব্যাঞ্জক কিছু তথ্য উঠে এসেছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাসস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারের মিশ্র
ডোজ প্রয়োগে শক্ত রোদ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে দেখা গেছে।
তাছাড়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার দু্ই ডোজের চেয়ে
ফাইজারের দুই ডোজ, কিংবা অ্যাষ্ট্রাজেনেকা-ফাইজার অথবা ফাইজার-অ্যাস্ট্রাজেনেকার
মিশ্র ডোজ সর্বোচ্চ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম।
তাহলে কি অ্যাস্ট্রাজেনেকার দু্ই ডোজ কার্যকর
নয়?
ভুলে গেলে চলবে যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ
টিকা যে কোভিড জটিলতা নিয়ে মানুষের হাসপাতালে যাওয়ার হার ৯০ শতাংশ কমাতে সক্ষম তা
এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে যে ফলাফল, তা হলো অ্যাস্ট্রাজেনেকার
টিকা সর্বোচ্চ কার্যকর। এই টিকার কার্যকর হয় ধীর গতিতে এবং সময়ের সাথে সাথে
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে, বিশেষ করে দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান বড় হলে।
বর্তমানে এই টিকার দুই ডোজের মধ্যে ব্যধান রাখা
হয় আট থেকে ১২ সপ্তাহ। এতে রোগ প্রতিরোধে ভালো সাড়া পওয়া যায়।
এই গবেষণার তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে বুস্টার ডোজ।
প্রথম দুই ডোজ হিসেবে একটি ব্র্যান্ডের টিকা দেওয়া হরে তৃতীয়টি অন্য ব্র্যান্ডের
দেওয়া ভালো।
কিন্তু মিশ্র ডোজের কারণে ঠাণ্ডা অনুভব করা,
মাথা এবং মাংসপেশীর ব্যথার মতো স্বল্পমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া অন্য কোনো
সমস্যা দেখা দেয় না।