করোনাভাইরাস: দৈনিক শনাক্ত রোগী ফের মধ্য এপ্রিলের পর্যায়ে

রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের পাশাপাশি ঢাকায় সংক্রমণের গতি বেড়ে যাওয়ায় এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ফের সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2021, 11:49 AM
Updated : 21 June 2021, 03:20 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৪ হাজার ৬৩৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের।

এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত নয় সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৪ এপ্রিল এক দিনে ৫ হাজার ১৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল।

গত এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য কমলেও নতুন রোগী বেড়েছে অনেকে। রোববার ৩ হাজার ৬৪১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অর্থাৎ, একদিনেই শনাক্ত রোগী বেড়েছে প্রায় এক হাজার। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ১২৯৪ জনই ঢাকা মহানগরের। আর ঢাকা বিভাগেই সবচেয়ে বেশি ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪ জনে। তাদের মধ্যে ১৩ হাজার ৬২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।

সরকারি হিসাবে একদিনে আরও ২ হাজার ৮২৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮২ জন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা আট লাখ পেরিয়ে যায় গত ৩১ মে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৮৫ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি মানুষের।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে সরকার এপ্রিলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর মে মাসে দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশ খানিকটা কমে এসেছিল।

কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আবার বাড়ছে।

ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ১২৯৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী জেলায় ৩৭২ জন, যশোরে ৩০৫ জন, চট্টগ্রাম জেলায় ১৯০ জন, খুলনা জেলায় ১৭৫ জন, টাঙ্গাইলে ১৬৫ জন, দিনাজপুরে ১২৩ জন, ফরিদপুর জেলায় ১১৬ জন এবং নোয়াখালী জেলায় ১০৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।

বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের ১০৪৫ জন থেকে বেড়ে ১৮৩৭ জন হয়েছে, যা সারা দেশের মোট শনাক্তের প্রায় ৪০ শতাংশ।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ২৯৩ জন থেকে বেড়ে ৪৬১ জন এবং খুলনা বিভাগে ৭৬৩ জন থেকে বেড়ে ৯৪৫ জন হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগী আগের দিনের ১০২৩ জন থেকে কমে ৭৯৯ জন হয়েছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫২৮টি ল্যাবে ২৪ হাজার ৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৩ লাখ ৫১ হাজার ৭৩৪টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ, যা আগের দিন ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ছিল।

দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আগের দিনের ৯ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ৩১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগে ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ১৮ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের হার।

 

গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ২৩ জন ঢাকা বিভাগের। এছাড়া ১৫ জন রাজশাহী বিভাগের, ১৪ জন খুলনা বিভাগের, ১১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

এছাড়া রংপুর বিভাগে ৯ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে।

মৃতদের মধ্যে ৫৬ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী। তাদের ৬৩ জন সরকারি হাসপাতালে, ৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। বাসায় মারা গেছেন ৬ জন।

তাদের ৩৯ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ২৩ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।