স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এই কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৪৮ হাজার ১১০ জন। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯৮ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন।
কিন্তু বাকি থাকা ৬ হাজার জনের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ টিকার সরবরাহ নেই।
টিকা না থাকায় এখানকার কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন।
তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, যে পরিমাণ টিকা মজুদ আছে, তা বৃহস্পতিবারই ফুরিয়ে যাওয়ার কথা।
“আমাদের টার্গেট ছিল প্রথম ডোজ যাদের দিয়েছি তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেব। কিন্তু এজন্য ভ্যাকসিন তো পেতে হবে। এখন কার্যক্রম প্রায় গুটিয়ে নেওয়ার মতো। তবে টিকা পেলে এটা আমরা আবার কন্টিনিউ করব।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম দৈনিক টিকাদানের যে হিসাব দেয়, তাতে দেখা গেছে, রাঙামাটি, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়ায় বৃহস্পতিবার টিকা দেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আছে আর মোটে চার লাখ ডোজ। ফলে আরও কয়েকটি জেলায় টিকাদান বন্ধ হওয়ার পথে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দিয়ে দেশে টিকাদান শুরু হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের কেনা টিকার মধ্যে এসেছে ৭০ লাখ ডোজ, আর ভারতের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে ৩২ লাখ ডোজ। সব মিলিয়ে এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ।
কোভিশিল্ড নামের এই টিকার দুটি ডোজ নিতে হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু করে সরকার।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশ জুড়ে গণটিকাদান শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০ মে পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৫১ জন। সব মিলিয়ে টিকাদান হয়ছে ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩ ডোজ। এরপর বৃহস্পতিবার আরও ৫৩ হাজার ৯১৫ ডোজ টিকা দেওয়া হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সরকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনতে গত বছরের নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে এই টিকা দেশে আসার কথা।
সেই ভরসায় শুরুটা ভালোই হয়েছিল। কিন্তু মহামারীতে বিপর্যস্ত ভারত টিকা রপ্তানি নিষিদ্ধ করলে বাংলাদেশ টিকাদান গতি হারায়।
জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে দুই চালান আসার পর মার্চে ও এপ্রিলে টিকা না পেয়ে গত ২৫ এপ্রিল নতুন করে কাউকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দেয় সরকার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এখন যে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে গেলে ঘাটতি থাকে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৪ ডোজ।
টিকার পরিবহন, টিকাদানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মোট টিকার ১ শতাংশ নষ্ট হবে বলে ধরে নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে টিকার মজুদ আরও এক লাখ ডোজের মতো কমে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার দেওয়ার পর তাদের হাতে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ডোজ টিকা থাকে।
তার হিসাবে, দৈনিক গড়ে ৫০ হাজার ডোজ করে দেওয়া হলে সাড়ে চার লাখ ডোজ টিকায় আরও সাত-আট দিন চালানো যাবে।
“এখন যদি কাল এক লাখ খরচ হয়ে যায় তাহলে আরও কম সময় যাবে। এটা আসলে হিসাব করা যাবে না। সব জায়গায় অবস্থা এক রকম না। অনেক জায়গায় শেষ হয়ে গেছে। কোনো জায়গায় ৪-৫ দিন চলবে কোনো জায়গায় ৭-৮ দিন চলবে,” বলেন শাসসুল হক।
এখন টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, টিকার নতুন চালান এলে দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম আবার শুরু হবে।
কিন্তু টিকা আবার কবে আসবে, তা এখনও অনিশ্চিত। সেরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা নিজ দেশের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দুই-এক মাসে ভারতের চাহিদা মেটানো যাবে না। যার অর্থ রপ্তানির আশু সম্ভাবনাও নেই।
যারা প্রথম ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকোর টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজে তাদের এই টিকাই নিতে হবে বলে এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য।
সেরাম ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ চীন থেকে সিনোফার্মের টিকা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। জুন মাসে বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের টিকাও বাংলাদেশে আসার কথা, তবে সেটাও যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজারের টিকা।
এই পরিস্থিতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে বাংলাদেশ নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে কথা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাকে অনুরোধ করা হয়েছে কিছু টিকা দিতে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথা থেকেও কোনো আশার খবর আসেনি।