সদ্য বিদায় নেওয়া এই মাসে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ২ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিনে মারা গেছেন ৮০ জন।
এর আগে এক মাসে সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছিল গত বছরের জুলাই মাসে, সেই সংখ্যাটি এপ্রিলের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
গত এপ্রিল মাসেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রথম ১ লাখ ছাড়িয়েছে। এই মাসে ১ লাখ ৪৭ হাজার জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এর আগে এক মাসে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের জুন মাসে ৯৮ হাজার ৩০৩ জন।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে, তাতে এপ্রিলে বিপর্যয়কর চিত্র ফুটে ওঠে।
২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারী নামিয়ে আনার পর ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
তারপর গত ১৩ মাসে এই পর্যন্ত দেশে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৮৪টি নমুনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যা নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
প্রথম রোগী ধরা পড়ার ১০ দিনের মধ্যে ১৮ মার্চ ঘটেছিল প্রথম মৃত্যু। দেশে এই পর্যন্ত মারা গেছে ১১ হাজার ৫১০ জন। মৃতের সংখ্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রাদুর্ভাবের মাসে (মার্চ, ২০২০) বাংলাদেশে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরের মাসে তা বেড়ে ১৬৩ তে পৌঁছায়। এরপর মে মাসে মৃত্যু হয় ৪৮২ জনের।
২০২০ সালের জুন মাসে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ানোর পর পরের দুই মাসেও মৃত্যু হাজারের উপরে ছিল।
জুন মাসে ১ হাজার ১৯৭ জন, জুলাই মাসে ১ হাজার ২৬৪ জন এবং অগাস্ট মাসে ১ হাজার ১৭০ জনের মৃত্যু ঘটে। সদ্য বিদায়ী এপ্রিলের আগে সর্বাধিক মৃত্যু জুলাই মাসেই ঘটেছিল।
গত জুলাইয়ের পর মৃতের সংখ্যা নেমে আসে। এরপর সে বছর আর হাজার ছাড়ায়নি। সেপ্টেম্বরে ৯৭০, অক্টোবরে ৬৭২, নভেম্বরে ৭২১, ডিসেম্বরে ৯১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
চলতি বছরের শুরুতেও সেই ধারায়ই চলছিল। জানুয়ারিতে ৫৬৮, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১, মার্চে ৬৩৮ জনের মৃত্যু ঘটে।
এর মধ্যে গত বছরের মার্চের পর গত ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, যা দেখে অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সব হিসাব ওলটপালট করে দেয়।
গত মার্চ থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করার পর এপ্রিলে রেকর্ড সংখ্যকের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরমধ্যে এপ্রিলের কয়েকদিন দৈনিক একশর বেশি মৃত্যু ঘটে। ১৯ এপ্রিল ১১২ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়।
এপ্রিলে ১ লাখ ৪৭ হাজার জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার মধ্যে ৭ এপ্রিল দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয়। সেদিন ৭ হাজার ৬২৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
এপ্রিলের আগে মার্চ মাসে ৬৫ হাজার ৭৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গত বছরের অগাস্টের পর এটাই ছিল সর্বাধিক সংখ্যা।
গত বছরের এপ্রিলে রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়ানোর পরের মাসেই তা ৩৯ হাজারে পৌঁছে যায়। জুন মাসে তা ৯৮ হাজারে ওঠে, যা ছিল সদ্য বিদায়ী এপ্রিলে আগে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
জুলাই মাসে ৯২ হাজারের পর অগাস্টে ৭৫ হাজার রোগী ধরা পড়ে। এরপর কমতে থাকে।
সেপ্টেম্বরে ৫০ হাজার, অক্টোবরে ৪৪ হাজার, নভেম্বরে ৫৭ হাজার, ডিসেম্বরে ৪৮ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
এ বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে ২১ হাজার রোগী শনাক্তের পর ফেব্রুয়ারিতে তা ১১ হাজারের ঘরে নেমে এসেছিল।
কিন্তু মার্চের পর পরিস্থিতি বিপর্যয়ের দিকে গেলে এপ্রিল থেকে পুনরায় কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের দিকে যায় সরকার, যা এখনও চলছে।
এই অবস্থায় গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য।
২৫ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত সপ্তাহের সঙ্গে আগের সপ্তাহের তুলনা করে অধিদপ্তর দেখাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর হারও ৩৩ দশমিক ০২ শতাংশ কমেছে।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসাকে লকডাউনের সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।
তবে তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে কারও কারও, যাদের একজন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম।
সংক্রমণ কেন কমছে, কেন বাড়ছে, তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্যের ভাষ্যে, “গত বছর ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে সংক্রমণের হার ১০ এর নিচে নেমেছিল। তখন তো লকডাউন ছিল না। আবার শীতে বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু বাড়ার জায়গায় কমে গেল। এই জিনিসটা কেন হল- সেটা তো জানতে পারলাম না।
“সেজন্য এখন আসলে লকডাউনের কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমল- নাকি এমনিতে তা হল, আমরা বুঝতে পারছি না। এ নিয়ে গবেষণা দরকার।”