করোনাভাইরাস: ১২ দিনে এক কোটি নতুন রোগী, বিশ্বে আক্রান্ত ১৫ কোটি ছাড়াল

ভারত ও ব্রাজিলে মর্মান্তিক বিপর্যয়ের মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ কোটি ছাড়িয়ে গেল, যার শেষ এক কোটি রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১২ দিনে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2021, 01:35 PM
Updated : 30 April 2021, 01:39 PM

এইতো গত ২৭ জানুয়ারি বিশ্বে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ কোটির মাইলফলকে পৌঁছায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অতি দ্রুত। মাত্র চার মাসের মধ্যে নতুন রোগী বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, শুক্রবার বিশ্বজুড়ে ১৫ কোটির নতুন খারাপ উচ্চতায় পৌঁছে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা।

এ সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১ লাখ ৬৭ হাজার। সুস্থতার সংখ্যাও অবশ্য বাড়ছে, মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ কোটি ৭৬ লাখ জন।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ কোটি ছাড়ায়।

এর আগে ১৮ এপ্রিল বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ কোটি ছাড়ায়। ২৩ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল সাড়ে ১৪ কোটি।

ফ্রেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে বিশ্বজুড়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুর দিকে বিশ্বে আগের ২৪ ঘণ্টায় ‌আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন লাখ, তা এখন ৮ লাখ ২১ হাজারে পৌঁছেছে।

এ সময়ে সংক্রমণের পাশাপাশি দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৪ হাজার ৮৭৬ জন। গত একদিনে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ভারতে ৩ হাজার ৪৯৮ জন।

শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্তও হয়েছে ভারতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার। এরপর গত একদিনে ব্রাজিলে ৭৯ হাজার ৭২৬ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫৩ হাজার ৮৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

গত একদিনে সবচেয়ে কম একজন আক্রান্ত হয়েছেন সামোয়া নামের দেশটিতে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইভ আপডেট অনুযায়ী, সর্বমোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার পর্যন্ত ৩ কোটি ২২ লাখ সংক্রমিত হয়েছে। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৯৭ জনের।

সর্বশেষ কয়েক দিনে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়া ভারত আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে এক কোটি ৮৭ লাখের মধ্যে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৪৭ জন।

সংক্রমণে তৃতীয় কিন্তু মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লাখ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ১ হাজার ১৮৬ জনের।

মৃত্যুর দিক থেকে তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা মেক্সিকোতে সংক্রমণের সংখ্যা কম। মোট মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৩৩০ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ লাখ ৪০ হাজার।

ফ্রান্সের অবস্থান আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে মোট ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার।তবে মৃত্যুর দিক থেকে তালিকায় নিচের দিকে ৮ নম্বরে, মোট মারা গেছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৩৮৫ জন।

আক্রান্তের দিক থেকে পাঁচ নম্বরে থাকা তুরস্কে সংক্রমিত হন মোট ৪৭ লাখ 88 হাজার। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৩৭ জনের।

সংক্রমণেরর তালিকায় এর পরে রয়েছে রাশিয়া ৪৭ লাখ ৫০ হাজার (মৃত্যু ১ লাখ ৮ হাজার ২৯০), যুক্তরাজ্য ৪৪ লাখ ২৯ হাজার (মৃত্যু ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৯), ইতালি ৪০ লাখ ৯ হাজার (মৃত্যু ১ লাখ ২০ হাজার ৫৪৪)।

আক্রান্তের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। সবচেয়ে কম আক্রান্ত ১ জন মাইক্রোনেশিয়ায়।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ১৯২ দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ডব্লিউএইচওর পরিসংখ্যানে ২২৩ দেশে নতুন এই করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের শেষ দিকে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ নামের নতুন এই করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব ব্যবস্থা নতুন এক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

বছর পেরিয়ে ২০২১ সালে বিশ্বে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে নতুন আশা তৈরি হলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের তোড়ে তা খুব বেশি কাজে আসছে না। নতুন ধরন নিয়ে একেক দেশে একেকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।

ফাইল ছবি

এই ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর দুদিন পর ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে প্রথম রোগী ধরা পড়ার পর জানা যায়, চীনের রাষ্ট্রীয় সীমানা পেরিয়ে গেছে এই ভাইরাস।

তারপর হু হু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা, দেড় মাসের মধ্যে এন্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই ধরা পড়ে রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন এই পরিস্থিতিকে মহামারী আখ্যায়িত করে।

কঠোর লকডাইনে চীন তিন মাসের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও ততদিনে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে রাশিয়ায় ব্যাপক মাত্রা পায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।

প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর চার মাসের মাথায় ১ এপ্রিল বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়। এর পরের সাত সপ্তাহে আরও ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় ২১ মে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

এরপর পাঁচ সপ্তাহের মাথায় ২৮ জুন সেই সংখ্যা কোটিতে পৌঁছায়। পরের ৪৩ দিনে তা পৌঁছায় দুই কোটিতে।

পাঁচ কোটির খারাপ মাইলফলকে পৌঁছায় ৯ নভেম্বর। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের অতি বিস্তারে আড়াই মাসের একটু বেশি সময়ে তা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত

১ এপ্রিল ২০২০         ১০ লাখ

২৮ জুন                   ১ কোটি

১১ আগস্ট                ২ কোটি

৯ নভেম্বর                 ৫ কোটি

২৭ জানু.২০২১          ১০ কোটি

২ এপ্রিল                   ১৩ কোটি

১৮ এপ্রিল                 ১৪ কোটি

আরও পড়ুন-