কোভিডে ২৪ ঘণ্টায় শতাধিক মৃত্যু যেসব দেশে

একদিনে শতাধিক রেকর্ড মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ করোনাভাইরাস আক্রান্তে মৃত্যুর একটি ‘খারাপ’ তালিকায় ঢুকে গেল। বাংলাদেশকে নিয়ে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মানুষ মারা যাওয়া দেশ হলো ২৪টি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2021, 04:49 PM
Updated : 16 April 2021, 06:01 PM

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণে প্রথম মৃত্যুর ঘটনার এক বছর দুই মাস হওয়ার দিন দুয়েক আগে শুক্রবার ১০১ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত দেশে ১০ হাজার ১৮২ জনের মৃত্যু হলো। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মত মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। এর আগে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে ৩৭ দেশে।

দেশে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

দীর্ঘদিন কম থাকার পর চলতি বছর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। ওই মাসের শেষের দিকে তা আরও বাড়ে। এ সময় মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ে, শুক্রবার যা একশ’ ছাড়িয়ে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওয়েসাইটে শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর তালিকার তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে ২৩ দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় একশতের ওপর মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার বাংলাদেশের ১০১ জনের মৃত্যুর সংখ্যা যোগ হলে তা দাঁড়ায় ২৪।

এতে দেখা যায়, সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ২১২ জনের। মোট মারা গেছেন ২৯ লাখ ৭৪ হাজার ৬৪২ জন।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১৯২ দেশে। শুক্রবার রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৩ কোটি ৯২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৭ জন।

বাণিজ্যের তথ্য প্রকাশকারী আরেকটি ওয়েবসাইট স্ট্যাটিসটাতেও গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ জনের বেশি মারা যাওয়া দেশের সংখ্যা বাংলাদেশ ছাড়া ২৩।

ডব্লিউএইচও এর তালিকার তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ব্রাজিলে ৩ হাজার ৪৫৯ জন, দেশটিতে মোট মৃত্যু ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮৮৪।

তবে মোট মৃত্যু সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে, ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১০ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৭৭২ জন। গত একদিনে মৃত্যুর সংখ্যায় এর পরে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মারা গেছেন ১ হাজার ১৮৫ জন; মোট মৃত্যু ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩০৮, যা বিশ্বে তৃতীয়।

ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য দেশের মধ্যে পাকিস্তানে একদিনে মৃত্যু একশতের বেশি। দেশটিতে বেশ কিছুদিন ধরে ১০০ এর চেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

তালিকায় সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় পাঁচ শতাধিকের বেশ কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে পোল্যান্ড (৬৮২) ও মেক্সিকো (৫১৮)।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শতাধিক মৃত্যু দেখা অন্য দেশগুলো হলো- ইতালি (৪৬৯), ইউক্রেন (৪৩৩), রাশিয়া (৩৯৮), আর্জেন্টিনা (৩৬৮), কলম্বিয়া (৩৩৭), ইরান (৩২১), পেরু (৩২৩), ফ্রান্স (২৯৫), জার্মানি (২৯৩), তুরস্ক (২৭৯), হাঙ্গেরি (২৫৬), চিলি (২১৮), ইন্দোনেশিয়া (১৬৭), রুমানিয়া (১৬৬), ফিলিপাইন (১৪৭), বুলগেরিয়া (১২৫), পাকিস্তান (১১৮) ও চেক ১০৫।

এছাড়া ৭০ এর ওপরে এবং একশতের নিচে মৃত্যু হয়েছে গ্রিস, ইকুয়েডর, দ. আফ্রিকা, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া ও স্লোভাকিয়ায়।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৮তম অবস্থানে।

দেশে গত ৩১ মার্চ ৫২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে দৈনিক মৃত্যু কখনই ৫০ এর নিচে নামেনি।

দৈনিক মৃত্যু গত দুদিন ধরে ৯০ এর বেশি ছিল। বৃহস্পতিবার ৯৪ ও বুধবার ৯৬ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ হাজার ৪১৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭৯ জনে দাঁড়াল।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফন করা হচ্ছে রায়েরবাজারের বধ্যভূমি কবরস্থানে। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর মৃতদের জন্য প্রার্থনা করতে আসেন তাদের স্বজনরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগী কমলেও শনাক্তের হার বেড়েছে।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে শুধু দেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও বাড়ছে সংক্রমণ। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে এখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। এমন মৃত্যু আর সংক্রমণে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

রয়টার্সের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ১১ শতাংশই ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায়। মোট মৃত্যুর ৬ শতাংশও এই দেশ ক’টিতে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৮৪ শতাংশ। দেশটিতে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬৪ জন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী এমন সংক্রমণের কারণে বুধবার সকাল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ চালু করে সরকার। একে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বলা হচ্ছে।

টানা আটদিনের এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: