করোনাভাইরাস: সাত দিনে শনাক্ত ২৮,৬৯৬ রোগী

গত এক সপ্তাহে দেশে মোট ২৮ হাজার ৬৯৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা মহামারী শুরুর পর থেকে সাত দিনে শনাক্ত রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা।  

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2021, 07:17 PM
Updated : 30 March 2021, 07:24 PM

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের পর সংক্রমণের হার বেশি ছিল জুন-জুলাই মাসে। সে সময় ১৮ জুন থেকে ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে মাত্র ৩০ দিনে এক লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

গতবছর ২৬ জুন থেকে ২ জুলাই- এই সাত দিনে ২৬ হাজার ৬৭১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যা এতদিন সাত দিনে শনাক্ত রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল।  

এ বছরের শুরুটা কিছুটা স্বস্তিতে গেলেও এখন আবার দৈনিক শনাক্ত রাগীর সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

সোমবার প্রথমবারের মত এক দিনে পাঁচ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর আসে; আর এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়।

এরপর মঙ্গলবারও আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৪২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগ বয়সে তরুণ। আগে যাদের কাজের জন্য বের  হতেই হত, তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি থাকত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখন সবাই বাইরে বের হচ্ছে। বিশেষ করে ইয়াংরা এখন অনেক বেশি বের হয়। এ কারণে তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি দেখা যাচ্ছে।”

সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে মোট ৯০ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।

আর গত সাত দিনে (২৪ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ) এ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২৫৬ জনের। এ পর্যন্ত মৃত্যুর মোট সংখ্যা নয় হাজার ছুঁইছুঁই করছে।

দেশে করোনাভাইরাসে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা যখন সবচেয়ে বেশি ছিল, সেই জুন মাসের ২৬ থেকে ৩০ তারিখ- এই সাত দিনে ৩০২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ।

মে মাসের শেষ থেকে অগাস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেশে পরীক্ষার তুলনায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার বেশিরভাগ দিনই ছিল ২০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ১২ জুলাই এই হার ৩৩ শতাংশে উঠেছিল।

এ বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসার পর ফেব্রুয়ারির পুরোটা সময় ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে ছিল। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে বাড়ার প্রবণতায় আবার তা ১৯ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

 

করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখন সারা দেশেই বাড়ছে। তবে সংক্রমণের হার বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুরসহ ২৯টি জেলাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

সংক্রমণে লাগাম দেওয়ার চেষ্টায় সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ সকল ক্ষেত্রে সব ধরনের জনসমাগম সীমিত করাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার।

উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করার পাশাপাশি গণ পরিবহনের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউরোপ থেকে আসা সবার ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তবে সবার আগে যে মানুষকে সচেতন হতে হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, “গত এক বছর ধরে আমরা যে চর্চাগুলো করেছি, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে শিষ্টাচারগুলো আমরা শিখেছি, গত দুই-তিন মাসে আমরা চরম আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। এ কারণেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি।… আমরা এখনও যদি সতর্ক হই, তাহলে অবশ্যই আমরা একে মোকাবেলা করতে পারি।”