বিশ্বখ্যাত
মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই টিকা নিরাপদ
বলে প্রতীয়মান হয়েছে এবং এটা ভাইরাস আক্রান্তদের হাসপাতালে
ভর্তি ও প্রাণহানি থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
তৃতীয় ধাপের
পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই রাশিয়া টিকাটি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ায় তা নিয়ে বেশ সমালোচনা
হয়েছিল। তবে
এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন,
স্পুৎনিক ভি টিকার সুফল দেখা গেছে।
ফাইজার, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মর্ডানা ও জনসেনের মতো পরীক্ষিত
টিকার তালিকায় স্পুৎনিক ভি এখন যুক্ত হচ্ছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে বলা
হয়, যুক্তরাজ্যে উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার
টিকা এবং বেলজিয়ামে উৎপাদিত জনসেনের টিকার মতো একইভাবে কাজ করে স্পুৎনিক ভি।
এটা তৈরিতে
ঠাণ্ডার জন্য দায়ী একটি ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে। মানবদেহের ক্ষতি করতে
পারবে না এমন একটি রূপ দেওয়া হয় সেটিকে। এরপর করোনাভাইরাসের ক্ষুদ্র একটি
অংশ তার মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
কোভিড-১৯: অক্সফোর্ড ও স্পুৎনিক টিকার মিলিত ট্রায়ালের ঘোষণা
এইভাবে
করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোড শনাক্ত করে মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয় এবং একে
পরাস্ত করা শিখে নেয়। বড় ধরনের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি ছাড়াই এটা হয়ে থাকে।
টিকা নেওয়ার
পরে শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করা শুরু করে, বিশেষত করোনাভাইরাসকে লক্ষ্য করেই এই অ্যান্টিবডি
তৈরি হয়। এর
ফলে করোনাভাইরাস আক্রমণ করলে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে
যায়।
রুশ এই
টিকা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। ফলে এটা পরিবহন ও সংরক্ষণ
করাও সহজ।
দ্বিতীয়
ডোজ ভিন্ন
স্পুৎনিক
ভি টিকাও দুই ডোজ দিতে হলেও এর প্রথম ডোজের চেয়ে দ্বিতীয় ডোজে সামান্য তফাৎ রয়েছে। প্রথম ডোজের ২১ দিন পর
দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়।
দুই ডোজই
করোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট
‘স্পাইক’ নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করে। তবে সেগুলোতে ব্যবহার
করা হয় আলাদা ‘ভেক্টর’- নিষ্ক্রিয় ভাইরাস যেটা মানবদেহে করোনাভাইরাসের
ওই ‘স্পাইক’ বয়ে নিয়ে যায়।
এর পেছনে
কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, দুটি আলাদা ফর্মুলা একই ভার্সন দুইবার ব্যবহারের চেয়ে
বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি এবং দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দিতে পারে।
পরীক্ষায়
কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ার পাশাপাশি এই টিকা নিরাপদ দেখা গেছে। টিকা গ্রহণকারীদের কারও
গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
যে কোনো
টিকারই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়ে থাকে। এই টিকার যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
দেখা গেছে সেগুলো সাধারণত মৃদু। তার মধ্যে বাহুতে ব্যথা, ক্লান্তি বোধ
এবং হালকা জ্বর জ্বর ভাব রয়েছে।
টিকা গ্রহণকারীদের
কেউ গুরুতর অসুস্থ বা কারও মৃত্যু হয়নি।
রাশিয়ার
পাশাপাশি এই টিকা আর্জেন্টিনা, ফিলিস্তিন, ভেনেজুয়েলা,
হাঙ্গেরি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরানসহ কিছু
দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ল্যানসেটের
প্রতিবেদনের সঙ্গে এক মন্তব্যে অধ্যাপক ইয়ান জোনস ও পল্লী রয় বলেছেন, তড়িঘড়ি করা এবং
স্বচ্ছতার ঘাটতির জন্য স্পুৎনিক ভি টিকা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।
“তবে এখানে যে ফল প্রকাশ হয়েছে তা স্পষ্ট এবং টিকার বৈজ্ঞানিক নিয়ম-নীতি প্রদর্শিত হয়েছে। অর্থাৎ আরেকটি টিকা এখন কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যুক্ত
হতে পারে।”
এই টিকা
সব বয়সীদের ক্ষেত্রে কার্যকর এবং প্রথম ডোজের পরেই কোভিড-১৯ এর তীব্রতা
কমিয়ে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন তারা।
টিকাটির
সরবরাহ কম হলেও এই বিষয়গুলো আশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
গত অগাস্টে
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
মস্কোর
গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করা ওই টিকার নাম দেওয়া হয় স্নায়ুযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রকে
টেক্কা দিয়ে রাশিয়ার তৈরি করা মহাকাশ যান স্পুৎনিক-১ এর নামে।
মানুষের
ওপর দুই মাসেরও কম সময় পরীক্ষা চালানোর পর চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেই ওই টিকার অনুমোদন
দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।