কোভিড-১৯: সামনে আরও যুদ্ধ আছে, সতর্ক করলেন পরামর্শক কমিটির প্রধান

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ‘ভালো কাজ করলেও’ সামনে আবারও সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন কোভিড-১৯ প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2020, 12:34 PM
Updated : 18 Oct 2020, 03:53 PM

রোববার ঢাকার একটি হোটেলে সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, শুরুতে পৃথিবীর অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশও ‘হতবিহ্বল’ হয়ে পড়েছিল। তবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ‘সামাল দিয়েছে’। সক্ষমতা অর্জন করেছে।

তবে আগামীতে সংক্রমণের সম্ভাব্য ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ এর জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ সামনে আছে। সরকার নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু দুটোই কমেছে। তবে এখনও শৈথিল্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। নিজেদের সুরক্ষিত রেখে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে, সেবা বন্ধ রাখা যাবে না।"

গতবছর ডিসেম্বরে চীন থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নতুন এই করোনাভারাসে আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যে চার কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, মৃত্যু হয়েছে ১১ লাখের বেশি মানুষের।

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ লাখ ৮৮ হাজারে, আর মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৬৬০ জনের।

নানা বিধিনিষেধে বিভিন্ন দেশে মহামারীর প্রকোপ কমিয়ে আনা গেলেও আবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের মত শীতপ্রধান অনেক দেশেই ঋতু পরিবর্তনের পর দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা। 

বাংলাদেশেও যে শীত মৌসুমে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, সেই শঙ্কার কথা জানিয়ে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সরকার প্রধানের নির্দেশনার পর রোডম্যাপ ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলার কথা বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধ বা কোনো টিকা মানুষ এখনও তৈরি করতে পারেনি। ফলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোভিড-১৯ এড়ানোর আর কোনো কৌশল আপাতত মানুষের জানা নেই। 

ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা কবে আসবে তা কেউ জানে না। সুতরাং সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

“আশা থাকা ভালো, কিন্তু কবে আসবে আমরা জানি না। কোনো ভ্যাকসিন প্রোডাকশনে যায়নি। কেউ বলে না যে এটা এক বছর না দুই বছরে পাওয়া যাবে। এজন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

“মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা- এগুলো কোনো রকেট সায়েন্স নয়। এই তিনটি কাজ করতে পারলে আমি মনে করি আমরা সেকেন্ড ওয়েভ থেকে হয়তো দূরে থাকব।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক করা হলেও তা এখন আগের মতো মানতে দেখা যাচ্ছে না। ছবি: সুমন বাবু

জাতীয় কমিটি অনেক দিন আগেই দেশে করোনাভাইরাসের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর সুপারিশ করলেও এখনও তা শুরু না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সরকারকে আবারও তাগাদা দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।  

তিনি বলেন, “অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কেউ নেগেটিভ হলে তাকে আরটিপিসিআর করতে হবে, কিন্তু কেউ পজিটিভ হলে তাকে আর আরটিপিসিআর করাতে হবে না। এই চাপটা কমানোর জন্য আমরা বারবার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের কথা বলেছি। সেটা সরকার অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু এখনও চালু হয়নি।”

“আর র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রয়োজনীয়তাও আমরা বুঝতে পারি। আমরা যদি অ্যান্টিবডি টেস্ট করে তাদের বের করতে পারি, তাহলে তারা ওয়ার্কফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারবে। ভ্যাকসিন যখন আসবে তখন তারা পেছনে থাকবে, আর যাদের প্রটেকশন নেই তারা আগে পাবে ভ্যাকসিন।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে বলেন, টিকা তৈরি হলে বাংলাদেশ যাতে তা পায়, সেজন্য ‘বেশ কিছু অগ্রগতি’ হয়েছে।

“বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন। উনারও একটা নির্দেশনা আছে, আমরা সেইভাবে কাজ করছি। আপনারা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই জানতে পারবেন, আমরা কোন ভ্যাকসিন নিতে পারব। আমরা ওই ভ্যাকসিন নেব- যেটা তাড়াতাড়ি, সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তালিকায় বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের তিনটি টিকার নাম থাকার বিষয়টি ‘গণমাধ্যমে জেনেছেন’ বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম তারা ডব্লিউএইচওর তালিকায় আছে। এটা যদি ভালো প্রমাণিত হয় বা কার্যকর হয় তাহলে আমরা অবশ্যই কনসিডার করব। কারণ ভ্যাকসিন কোনোটাই এখনও কার্যকর হয় নাই। তো যারা যারা ভ্যাকসিন তৈরি করছে, আমাদের দেশের কোম্পানিসহ, যা ভালো হবে তা আমরা অবশ্যই নেব।”

মহামারী মোকাবেলা করতে গিয়ে গত সাত মাসে স্বাস্থ্য বিভাগকে নিয়ে অনেকে ‘নেতিবাচক’ কথা বললেও কেউ ‘মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি’ বলে উষ্মা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তারা ঘরে বসে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সমালোচনা করেছে। কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কিন্তু আমাদের চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সেনাবাহিনী মাঠে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। এজন্যই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”

অন্যদের মধ্যে বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাচিপের সভাপতি ইকবাল আর্সলান, সাধারণ সম্পাদক এমএ আজিজ, শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক এমএ আজিজ, সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশের সভাপতি এএইচএম তৌহিদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এসএম কামরুল চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।