কোভিড-১৯: শীতেও অর্থনীতি সচল রেখেই মোকাবেলার চিন্তা

শীতকালে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা এলে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার সব পন্থা রেখেই কর্মপরিকল্পনা করতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2020, 01:52 PM
Updated : 22 Sept 2020, 01:52 PM

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।

সচিবালয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বেশ কয়েকজন সচিব, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আইজিপি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ (পিএসও) সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ যদি আসে আমরা টোটাল প্রোগ্রামকে ভাগ করে নিলাম।

“ক্লিনিক্যাল সাইডটা আমাদের এক্সপার্টরা রেডি করবেন। যদি রোগটা বিস্তার করে কীভাবে তার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান হবে। সাপ্লিমেন্টারি ক্লিনিক্যাল সাইড- যেহেতু শীতের সময় অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি থাকবে, সেটাকেও ইমিডিয়েটলি সবাইকে সচেতন করে দেওয়া এবং তারও একটা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান রেডি করা।

“ব্যাপক প্রোমোশনাল ক্যাম্পেইন চালাতে হবে সবাই যাতে মাস্ক পরে। সবাই যাতে দূরত্বটা বজায় রাখে। স্বাস্থ্য নির্দেশিকা সবাই যাতে মেনে চলে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মাঠ প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পুলিশ, সেনাবাহিনী কীভাবে এনফোর্সমেন্ট করবে সেই ওয়ার্ক প্ল্যানও করা হবে।

“আমাদের দেশে ব্যাপক লোকজন বাইরে থেকে আসছে ও যাচ্ছে; তাদেরকে কীভাবে পূর্বসতর্কতামূলকভাবে ট্রিটমেন্ট করব যাতে বাইরে থেকে আর ভাইরাস না আসে। বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর বড় টিম আছে, উনারা দেখাশোনা করছেন।”

আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়গুলোকে ওয়ার্ক প্ল্যান রেডি করতে বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ওয়ার্কপ্ল্যান করে ওপেন করে দেব।”

অভিযান বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না, সিনারির উপর ডিপেন্ড করবে। যদি কোনো রকম ইমপ্যাক্ট না হয়, আমাদের মূল কথা থাকবে আমরা ইকনমিকে সচল রাখব ইনশাল্লাহ।”

এক প্রশ্নে আনোয়ারুল জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন অফিসগুলো কীভাবে চালাবে সেই দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

পিআইডি, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদগুলোকে ব্যবহার করে কোভিড-১৯ নিয়ে মানুষকে আরও সচেতন করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্মচারী আছে, তারাও এ বিষয়ে কাজ করবেন। গণমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা আছে।

কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ধাক্কা এলে ফের লকডাউন দেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আমরা এখনও এটা চিন্তা করিনি।”

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমরা এখন কোলাবরেশন উইথ সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ফরেন মিনিস্ট্রির সাথে, এয়ারপোর্টে এবং বিভিন্ন এন্ট্রিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন থাকে।

“অনেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আসে তারা কোভিড ফ্রি। যারা নিয়ে আসেননি তারা কতদিন সেখানে হোম কোয়ারেন্টিইনে ছিলেন সেই সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন। যাদের এ রকম কোনো সার্টিফিকেট নেই, কোনো কিছু নেই এবং যাদের সন্দেহ হয়, তাদের আমরা ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাই।”

ঢাকার দিয়াবাড়ি ও হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা আছে জানিয়ে পিএসও বলেন, “করোনা যখন পিকে ছিল তখন সাড়ে তিন হাজারের মতো ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টিনের ক্যাপাসিটি ছিল। সেখানে পনেরশ’র উপরে উঠে নাই। এজন্য আমরা এটাকে (ধারণ ক্ষমতা) কমিয়ে দুই হাজারের মতো রেখেছি। এতে আমাদের সাশ্রয় হচ্ছে।

“যদি আবার রিভাইভ করে, সিচুয়েশন খারাপ হয়ে যায় তাহলে আমরা কোয়ারেন্টিন সুবিধা আবার সাড়ে তিন হাজারে নিয়ে যাব।”

যারা কোভিড ফ্রি এবং ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করে এসেছেন তাদের ‘কোয়ারেন্টিনে নেওয়া লাগে না’ বলেও জানান পিএসও মাহফুজুর রহমান।