একটা কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে ‘একটা কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার’ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2020, 09:08 PM
Updated : 7 June 2020, 03:23 AM

করোনাভাইরাসের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে শনিবার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ এর পঞ্চম পর্ব ‘করোনা সংকটকালে স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।

মানুষের চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণও বাড়ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা যদি দেখি, আক্রান্তদের ৮০ ভাগ হল ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের। ল্যান্ডমাস বিবেচনা করলে কিন্তু ৫০ পারসেন্ট আক্রান্ত হয় নাই।

“কিন্তু আমরা দেখছি, গার্মেন্ট বা ঈদযাত্রায় মুভমেন্ট বাড়লে আক্রান্ত বেড়ে যাচ্ছে। মুভমেন্ট কমায় দিলে আক্রান্ত কমে যাচ্ছে।”

জাহিদ মালেক বলেন, “একটা কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমাদের পরামর্শক কমিটি রয়েছে, আমাদের জাতীয় কমিটিতেও বেশ কিছু মন্ত্রণালয় রয়েছে। তাদের সবার প্রপোজাল অনুযায়ী কাজ করলে ভালো হবে মনে করি।

“আমরা ফরম্যাটিভ স্টেজে আছি, তাই কিছু বলছি না। তবে আমাদের সায়েন্টিফিক্যালি, প্ল্যানমাফিক বেরিয়ে আসতে হবে।”

ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের পর অন্যান্য জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তার প্রভাব কৃষিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আক্রান্তের সংখ্যা যদি কম রাখতে না পারি তাহলে কিন্তু অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। এখন আমাদের কৃষি খুব ভালো আছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা যদি অন্য জেলায় বাড়তে থাকে তাহলে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাহলে সেটা হয়ে যাবে মারাত্মক। এখানে খাওয়া-দাওয়ার অভাব দেখা দেবে।”

গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৬৩৫ জনকে নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৬৩ হাজার ২৬ জনে।

এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ে যাবে বলেও সতর্ক করে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “গার্মেন্ট আসল, ঈদ আসল….বাজার করল, ঈদে যাওয়া আসা করল। এক লাফে ৫০ হাজার হয়ে গেল। সব সময় বলছি, সংক্রমণের চেইনটা যদি কাট করতে না পারি তাহলে সেটা কিন্তু বন্ধ হবে না। এভাবে চলতে থাকলে আরও ৬০, ৭০ হাজার নতুন অ্যাড হয়ে যাবে। তখন কোনো হাসপাতালে আমরা জায়গা দিতে পারব না।

“কারণ এত রোগী আইসা যাবে। ১০ পারসেন্টের যদিও হসপিটালাইজেশন লাগে তাহলে পরে আপনারা দেখেন ৭০, ৮০ হাজার লোকের আবার নতুন করে জায়গা দিতে হবে। আমাদের সে জায়গা আছে কি? এটা হল দেখার বিষয়।

“প্রতিটি জেলার খবর আমার কাছে আছে। বাড়ছে কীভাবে সব সময় দেখেছি। যখনই লোক গেছে ওখানে… সংক্রমিত করে তারা ঢাকায় চলে আসল।”

রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড-১৯ এর জন্য ডেডিকেটেড করা হলেও এখন সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালগুলোকে নন-কোভিড রোগীর পাশাপাশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর জন্য আলাদা ইউনিট তৈরির নির্দেশনাও দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ৫০টি ল্যাবে এখন নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।

নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়াতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে আরও ১৫০টি আরটি-পিসিআর মেশিন কেনা হচ্ছে বলে এই অনুষ্ঠানে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নতুন করে আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার জন্য আরও সাড়ে তিন হাজার টেকনিশিয়ান নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে। 

রাজধানীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত চিকিৎসকদের জন্য মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে ২৫০ শয্যার একটি আলাদা হাসপাতাল তৈরি করার কথা বলেন মন্ত্রী। ওই মার্কেটে এখন কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য দেড়শ আইসোলেশন শয্যা রয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে যদি কোনো বেসরকারি হাসপাতাল রোগীদের সেবা দিতে না চায় তাহলে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড আরও সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, যিনি এখন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য।

পাশাপাশি রাজধানীর যত্রতত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধেরও সুপারিশ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা জানান, জনগণকে সঠিকভাবে মাস্ক ও পিপিই পরিধান শেখাতে ছাত্রলীগের কর্মীরা কাজ করছে।

বিএসএমইউ’র হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল জানান, তারা কিউবা ও জার্মানির গবেষকদের সঙ্গে মিলে নতুন করোনভাইরাসের প্রোফাইল ক্যানথেরাপিউটিক এজেন্টের পেটেন্ট ফাইল করেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, আমরা যদি উপযুক্ত রিসার্চ ভেন্যু পাই তাহলে এদেশের যে নিয়মকানুন আছে সব নিয়মকানুন ফলো করে আমরা মাসখানেকের মধ্যে এ ওষুধের ফেজ-১, ফেজ-২ এর ট্রায়াল শুরু করতে পারব।”

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান ও  কার্ডিয়াক সার্জনস সোসাইটি অব বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি আশরাফুল হক সিয়াম।