রোগীদের মৃত্যুর দায় ইউনাইটেড এড়াতে পারে না: তথ্যমন্ত্রী

রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে করোনাভাইরাস ইউনিটের পাঁচ রোগীর মৃত্যুর দায় ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2020, 01:04 PM
Updated : 2 June 2020, 01:04 PM

গত ২৭ মে রাত পৌনে ১০টার দিকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগে। আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও তার মধ্যেই পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।

ঘটনার পরদিনই ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ২৮ মে ওই তদন্ত দলের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকার নামী ওই হাসপাতালের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল ‘নামমাত্র’।

অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ২৪ ঘণ্টা একজনের থাকার কথা থাকলেও দুর্ঘটনার সময় হাসপাতালে কেউ ছিলেন না। কে কী কাজ করবে, তাও নির্ধারণ করা ছিল না।

এছাড়া হাসপাতালে ১১টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও তার আটটিরই মেয়াদ এক মাস আগে শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে তদন্ত দলের একজন সদস্য সেদিন জানিয়েছিলেন।

এদিকে একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট মঙ্গলবার এক আদেশে ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ১৭ জুনের মধ্যে জমা দিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “যে পাঁচজন মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই হাসপাতাল (ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ) এড়াতে পারে বলে আমি মনে করি না।”

ওই সংবাদ সম্মেলন নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, যারা এই সময়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছপা হচ্ছে এবং তাদের অবহেলার কারণে রোগীরা মৃত্যুবরণ করছে, তারা আসলে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ করছে।

“আমি আশা করব, বেসরকারি হাসপাতালগুলোসহ কোনো হাসপাতালই এ ধরনের আচরণ করবে না। এখনই সময় আর্তমানবতার সেবার হাতকে প্রসারিত করা।

“তবে অনেক ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এই পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের জীবনকে বিপন্ন করে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, তাদেরকে আমি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই, তারা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য। মানুষকে সেবা না দিয়ে হাসপাতাল যদি হাত গুটিয়ে নেয়, সেটিকে তখন আর হাসপাতাল বলা যায় না।

“আমি নিজেও ব্যথিত যে, প্রায়ই আমরা কাগজে ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন রোগী একটার পর আরেকটা হাসপাতালে যাচ্ছে, কিন্তু হাসপাতাল ভর্তি নিচ্ছে না।…এগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক এবং প্রাইভেট বা যে কোনো হাসপাতালের এ ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান বলেন, “সরকার এগুলো পর্যবেক্ষণ করছে, ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, কেউ রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে অবহেলা করলে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“এখন পর্যন্ত হুঁশিয়ারির মাধ্যমে তাদেরকে সেবামুখী করার চেষ্টা করা হলেও অবহেলার ঘটনা ক্রমাগত ঘটতে থাকলে অতি শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।”