শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফকিরাপুলের ওই হোটেলের গেইটের তালা খুললেও প্রায় তিন মাস বন্ধ হোটেলের কক্ষগুলো বসবাসের অনুপোযোগী হওয়ায় তাদের ফিরতে হয় বলে জানান এই নার্সরা।
আল হাসান ইন্টারন্যাশনাল নামের হোটেলটির মালিক এই ঘটনার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। মৌখিকভাবে হোটেল ভাড়া নেওয়ার কথা বলার পরে কোনো চুক্তি হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে পরে আর কোনো যোগাযোগও করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক রাখি বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাময়িক সমস্যা হয়েছে।”
এই হোটেল ঠিক করার বিষয়টি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ফোন করলে আজাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জুয়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনা রোগীদের সেবা দিতে আসা নার্সদের এভাবে কষ্ট দেওয়া ঠিক হয়নি।”
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে প্রায় সাড়ে সাতশ নার্স পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। একজন নার্স সাতদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। পরে আরও ছয় দিন ছুটি কাটিয়ে আবার কাজে যোগ দেবেন। এই নার্সদের মধ্যে ১৫৮ জন নতুন নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের কিছু সংখ্যকসহ পুরোনো অনেকের থাকার জন্য এই হোটেল ভাড়া করেছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী নার্সরা জানান, শনিবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে শুক্রবার রাতেই তাদের হোটেলে চলে আসতে বলেছিলেন হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক।
তার নির্দেশ মতো সন্ধ্যা ৬টা থেকে তাদের অনেকে হোটেলের সামনে চলে আসেন। কিন্তু হোটেলের প্রধান ফট্ক খোলা হচ্ছিল না।
নতুন চাকুরি পেয়ে ঢাকার বাইরের একটি জেলা থেকে আসা একজন নার্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যোগদান করতে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছিলেন। হোটেল থাকতে হবে জানার পর সেখান থেকে চলে এসেছেন।
“সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে অপেক্ষা করছি। কিন্তু হোটেলের প্রধান ফটক তালাবন্ধ থাকায় ভেতরে ঢুকতে পারছি না। আমরা প্রায় দেড়শ জনের মতো মেয়ে দুই ঘণ্টা ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। হোটেলের তালা খুলছে না।
“তারা বলছে, তাদের এ বিষয়ে কেউ জানায়নি। বলেন এভাবে রাস্তায় কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়? অনেকের সঙ্গে অভিভাবক আছে। অনেকের সঙ্গেই নাই। যাদের সঙ্গে কেউ নেই তারা কিন্তু আরও চাপে পড়ে গেল।”
এ ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে আরেকজন নার্স বলেন, “আমাদের অনেকেই ডেপুটি মেট্রনের কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছি আমরা কোথায় থাকব। আমাদের বলা হয়েছিল শুক্রবার রাতে বাসায় থাকতে। শনিবারের ডিউটি শেষে গাড়িতে করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু এক ঘণ্টা পরে আবার জানায় যে, এই হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে চলে আসতে। এসে দেখি এই অবস্থা।”
রাত ১১টার দিকে একজন নার্স ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হোটেলের ফটক খুললেও সেখানে থাকার উপযোগী পরিবেশ না থাকায় তারা বাসায় ফিরে গেছেন।
“সেখানে থাকার অবস্থা নেই। রুমগুলো ছোট, ভেন্টিলেশন নেই। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অপরিচ্ছন্ন, সেখানে থাকার মতো অবস্থা নাই। এ কারণে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমি চলে এসেছি। আমি আসার সময় দেখে এসেছি অনেকে বসে আছেন।”
“কিন্তু তারা সারা দিন আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। কোনো চুক্তি হয়নি, কয়টি রুম ভাড়া নেবে, কতদিনের জন্য ভাড়া নেবে কিছুই বলেনি। হঠাৎ ৭টার দিকে আমার দারোয়ান ফোন করে বলে প্রায় একশজনের বেশি লোক হোটেলে এসেছে।”
তিনি বলেন, “আমার হোটেল বন্ধ তিন মাস ধরে। সেখানে শুধু দারোয়ান থাকে, বাকি সবাই গ্রামের বাড়িতে। হঠাৎ করে আসলে আমি কীভাবে ব্যবস্থা করব? তারপরও হোটেল খুলে দিয়েছিলাম। বলেছি একদিন সময় দিলে সব ঠিকঠাক করে দেব। কিন্তু উনারা পরে চলে গেছেন।”
এই ঘটনা কেন ঘটল জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক রাখি বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা আমাদের ডিডি স্যারের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। ঢাকায় এখন হোটেল পাওয়াও কঠিন। চাইছিলাম ধারেকাছে কোনো হোটেলের ব্যবস্থা করতে। হোটেলের ডিল করতে করতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। এ কারণে মেয়েদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।”
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
এই হয়রানিকে ‘অমানবিক অত্যাচার’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, “অব্যবস্থাপনার কারণে এটা হয়েছে। সরকার টাকা দিচ্ছে, কিন্তু সব জায়গায় এ ধরনের অব্যবস্থাপনা। এটা খুবই দুঃখজনক।”