লকডাউন শিথিল হলে নিরাপদ থাকা যাবে?

বিশ্বজুড়ে লকডাউন শিথিল হতে থাকায় মানুষ পরস্পরের কাছাকাছি আসছে; তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কীভাবে কতটা বাড়ছে?

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2020, 05:45 AM
Updated : 27 May 2020, 05:45 AM

কর্মক্ষেত্র, পরিবহন ও রেস্তোরাঁসহ নানা প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।

সমস্যা হল, ভাইরাস কীভাবে সংক্রমিত হচ্ছে তার তথ্য-প্রমাণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তেমন পাওয়া যায় না। আর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারছেন না বলে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট হচ্ছে না।

ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে দেশে দেশে লকডাউন শিথিল হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে জনগণের থেকেও কিছুটা চাপ আসছে।

লকডাউন শিথিল হওয়ায় প্রধান যে ঝুঁকিগুলো তৈরি হবে সেসব বিষয় বোঝার চেষ্টা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক দূরত্ব

গত শতকের তিরিশের দশক থেকে যেসব গবেষণা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, যখন কেউ হাঁচি-কাঁশি দেন, তার সঙ্গে বেরিয়ে আসা কণাগুলো হয় বাষ্পীভূত হয়ে যায় অথবা এক মিটারের মধ্যে নিচে পড়ে যায়।

সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই এক মিটার ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলে আসছে, যা ‘সামাজিক দূরত্ব’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

কোনো কোনো দেশের সরকার এই দূরত্ব বাড়িয়ে দেড় থেকে দুই মিটারও করেছে। এর অর্থ আপনি আরেকজন থেকে যত দূরে থাকবেন ততই মঙ্গল। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার বিষয়টি শুধু এই দূরত্বের ওপর নির্ভর করে না।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময়। কতক্ষণ আপনি অন্য কারও কাছে থাকলেন তা এখানে বিবেচ্য।

যুক্তরাজ্য সরকারের পরামর্শ মতে, আক্রান্ত ব্যক্তির এক মিটার দূরে ছয় সেকেন্ড থাকলে যে ঝুঁকি তৈরি হবে সেই একই ঝুঁকি তৈরি হবে আক্রান্তদের দুই মিটার দূরত্বে এক মিনিট থাকলে।

যখন সহকর্মীর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না, তখন সময় কমিয়ে আনার কথা ভাবতে হবে।

সময়ের মত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বায়ু চলাচল।

খোলা জায়গায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে, কেননা কেউ ভাইরাস ছড়ালে তা বাতাসে দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার অর্থ এই নয় যে, আপনার ওই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি শূন্য হবে।

ঘরের বাইরেও একজন থেকে আরেকজনের ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে এবং কেউ কাছাকাছি এলেও মুখোমুখি কথা বলতে বারণ করা হচ্ছে।

কিন্তু ঘরের ভেতর, যেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল নেই এবং দীর্ঘক্ষণ লোকজন কাছাকাছি থাকতে পারে, সেসব জায়গায় ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি।

রেস্তোরাঁয় দূরত্ব রেখে বসলেও এয়ার কন্ডিশনারের মাধ্যমে কীভাবে ভাইরাস সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে, তার একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করেছেন গবেষকরা।

রেস্তোরাঁয় কতটা ঝুঁকি?

চীনের গুয়াংজু শহরে ‘ক্লাস্টার’ সংক্রমণের ওপর একটি গবেষণায় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

গত জানুয়ারিতে একটি রেস্তোরাঁয় এক মিটার দূরত্বে রাখা বিভিন্ন টেবিলে বসে খাবার খেয়েছিলেন লোকজন। তাদের একজন ছিলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, তবে লক্ষণ না থাকায় তিনি নিজেও তখন জানতেন না।

পরের কয়েক দিনে ওই রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণকারীদের মধ্যে নয়জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে পাঁচ বসেছিলেন আক্রান্ত ওই ব্যক্তি থেকে বেশ কয়েক মিটার দূরের টেবিলে।

ওই ঘটনা থেকে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে এসেছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির নিঃসৃত ড্রপলেটে থাকা ভাইরাস এয়ার কন্ডিশনারের মাধ্যমে সেখানে ছড়িয়ে পড়েছিল।

এর জন্য দুটি এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিটকে দায়ী করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, “সংক্রমণে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল বায়ু প্রবাহের দিক।”

তদের এই পর্যবেক্ষণ সঠিক বলে প্রমাণিত হলে একই ধরনের বায়ু চলাচলের ব্যবস্থার কোনো কক্ষে টেবিলগুলো এক মিটারের বেশি দূরত্বে থাকলেও লোকজনের ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি

কারখানা বা অফিসে সোশাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলা কঠিনতর হয়ে উঠতে পারে।

আপনি সহকর্মীদের খুব কাছাকাছি এসেছেন কি না তা বের করার একটি সহজ উপায়- ‘ব্রেথ’ টেস্ট’ বের করেছেন ইউনিভার্সিটি অব লেস্টারের ড. জুলিয়ান টাং। 

মানুষ যখন কথা বলে তখন বাতাস কীভাবে প্রবাহিত হয় তা নিয়ে গবেষণা করে এই ভাইরোলোজিস্ট দেখেছেন, স্বাভাবিক কথোপকথনের সময়ও একজন থেকে আরেকজনে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

“আপনি যদি আপনার বন্ধুর শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে গন্ধ পান- তা রসুন বা তরকারি বা অ্যালকোহল যা-ই হোক না কেন- তাহলে তিনি শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে যা বের করছেন তা আপনি গ্রহণ করছেন।

“এবং আপনি এই বাতাস যতটা গ্রহণ করবেন, আপনার শ্বাসের সঙ্গে ভাইরাস টেনে নেওয়ার ঝুঁকি ততটাই বেড়ে যাবে।”