অর্থাভাবে প্রাথমিকে এক সেট প্রশ্ন

অর্থাভাবে বিকল্প না রেখে মাত্র এক সেট প্রশ্নে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া এই পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2014, 02:03 PM
Updated : 3 Dec 2014, 02:31 PM

টাকার ‘অভাবে’ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় একাধিক সেট প্রশ্নপত্র করা যায়নি জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর হোসেন বলছেন, আগামীতে ‘ডিজিটালি’ প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা কেন্দ্রেই তা ছাপানো হবে। তাই প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ঝুঁকি থাকবে না।

এক সেট প্রশ্নে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার ‘যৌক্তিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

গত ২৩ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ২৬৫ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়।

পরীক্ষা শুরুর দিন থেকেই এই সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন ফাঁসের ‘প্রমাণ’ তুলে ধরে অধ্যাপক জাফর ইকবাল গণমাধ্যমে নিবন্ধও লেখেন।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে সাজেশন কমন পড়ার দাবি করা হয়েছে।

আগের বছর প্রাথমিক সমাপনীর বাংলা বিষয়ের ৫৩ শতাংশ এবং ইংরেজির ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তেই উঠে আসে।

বিকল্প কোনো প্রশ্ন না রেখেই প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলমগীর বলেন, “একাধিক সেট প্রশ্ন ছাপানোর মতো টাকা নেই। সরকার টাকা দিলে যতো সেট প্রশ্ন চাইবে ততো সেট প্রশ্নই ছাপানো হবে।”

তিনি বলেন, “ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশন (ন্যাপ) প্রাথমিক সমাপনীর চার সেট প্রশ্নের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে বিজি প্রেসে পাঠায়।

“চার সেট থেকে লটারির মাধ্যমে এক সেট প্রশ্ন বাছাই করে ছাপানো হয়। টাকা না থাকায় বাকি তিন সেট ছাপানো হয়নি।”

ফাইল ছবি

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), এসএসসি ও এইচএসসিতে চার সেট প্রশ্ন ছাপানো হয়। পরীক্ষার দিন সকালে লটারি করে নির্ধারণ করা হয় কোন সেট প্রশ্নে পরীক্ষা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে প্রয়োজনে ৩২ সেট প্রশ্ন করা  হবে বলে এর আগে বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬০ টাকা ফি নেওয়া হয় জানিয়ে আলমগীর বলেন, অন্য পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এর থেকে অনেক বেশি ফি নেওয়া হয়।

“প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা নিলে তা নিয়েও কথা উঠবে। কারণ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা অবৈতনিকভাবে পড়াশোনার সুযোগ পায়।”

বিজি প্রেসে আর নয়

আগামীতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্ন ‘ডিজিটালি তৈরির’ পাশাপাশি ছাপানোর কাজও পরীক্ষা কেন্দ্রেই করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন, “পরীক্ষা শুরুর এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে কম্পিউটারে প্রশ্ন তৈরি করা হবে। বিশেষ সফটওয়্যার ডেভলপ করা হবে এবং এর মাধ্যমে প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ওই প্রশ্ন ডাউনলোড করতে পারবেন।

“প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রশ্ন ছাপিয়ে সেই প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হবে।”

এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আলমগীর হোসেন বলেন, “ডিজিটালি প্রশ্ন ছাপানো শুরু হলে আর বিজি প্রেসে গিয়ে প্রশ্ন ছাপাতে হবে না। সব ধরনের প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ প্রশ্ন ফাঁস করার সুযোগই পাবে না।”

পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপানোর জন্য সব কেন্দ্রেই কম্পিউটার, ছাপানোর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ সরবারহ নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

২০০৯ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী এবং তার পরের বছর থেকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

‘এক সেট প্রশ্নে পরীক্ষা কেন?’

এক সেট প্রশ্নে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “এক সেট প্রশ্ন করে পরীক্ষা কী করে হয়? কী অসম্ভব ব্যাপার!”

এক সেট প্রশ্নে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা প্রধানমন্ত্রীসহ নীতি নির্ধারকরা জানেন কি না সেই প্রশ্ন রেখে রাশেদা বলেন, “আমার ধারণা এটা প্রধানমন্ত্রীর কানে গেলে তিনি ক্ষেপে যাবেন।”

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পরীক্ষা পদ্ধতির ওপর তারা আস্থা হারাবে।”

জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা তুলে দেওয়ারও দাবি জানান রাশেদা কে চৌধুরী।