জামায়াতে ইসলামীর হরতালে জেএসসি-জেডিসির রবি-সোমবারের পরীক্ষা হবে কি না তা স্পষ্ট করেননি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
Published : 29 Oct 2014, 05:45 PM
পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে এই হরতালে নিজেও ‘উদ্বিগ্ন’ জানিয়ে বুধবার বিকালে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “পরীক্ষা পেছানোর বিষয়টি আমরা এখনো বিবেচনায়ই নিচ্ছি না। হরতাল হটান, হরতাল বন্ধ করেন।”
আগামী ২ নভেম্বর থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এই সমাপনী পরীক্ষা শুরু হওয়ার সূচি কথা। গত ২৩ জুলাই জেএসসি-জেডিসির পরীক্ষার এই সূচি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রোববার জেএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র এবং জেডিসিতে কুরআন মজিদ ও তাজবিদ আর সোমবার জেএসসিতে বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং জেডিসিতে আত-তাওহীদ ওয়ালফিকহ এবং আকাইদ ও ফিকহ পরীক্ষা রয়েছে।
সারা দেশের ২৭ হাজার ৯২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ৯০ হাজার ৬৯২ জন শিক্ষার্থী এবার এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু শুরুর দিন থেকেই হরতালের ঘোষণায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
তানভির নামের সেগুনবাগিচা এলাকার এক জেএসসি পরীক্ষার্থী বলে, রবি ও সোমবার পরীক্ষা হবে কি না তা নিশ্চিত হতে পারলে অন্য বিষয়ের প্রস্তুতি নেওয়া যেত।
নিজের মেয়ে পরীক্ষা দেবেন জানিয়ে মিরপুরের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, “আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি হরতালে পরীক্ষা হবে না। কিন্তু সরকার পরীক্ষার নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে আমাদের টেনশনে রেছেখে, এটা ঠিক না।”
হরতালে পরীক্ষা পেছান হবে কি না- এমন প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “আমরা পরীক্ষা পেছাব কেন? যারা হরতাল দিয়েছেন তারা বাধা সৃষ্টি করার জন্যই হরতাল দিয়েছেন, যেন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
আদালতের রায় নিয়ে এই হরতালের যৌক্তিকতা থাকতে পারে না বলেও শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য।
“একাত্তরে মানুষ হত্যা করে জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন, আজকে হরতাল দিয়ে জাতির ভবিষ্যতকে ধ্বংস করতে চান। পরীক্ষা যেন নির্বিঘ্নে হতে পারে সেই সুযোগ করে দেওয়া সবার কর্তব্য।”
তারপরও সাংবাদিকরা বার বার মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন- হরতালে পরীক্ষা নেওয়া হবে কি-না।
“শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা উদ্বেগে রয়েছেন, উদ্বেগ আমরা সৃষ্টি করিনি। যারা এই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন তারা সরে যাক। যারা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা সরে দাঁড়াক। আমরা এখনো পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেইনি।”
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের পর দলটি বৃহস্পতি, রবি ও সোমবার এই হরতাল ডাকে।
গত বছরের জেএসসি-জেডিসির কয়েকটি পরীক্ষাও বিএনপি-জামায়াতের হরতালের কারণে পিছিয়ে যায়।
প্রশ্ন ফাঁসে ‘জিরো টলারেন্স’
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
জেএসসি-জেডিসির পরীক্ষা নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রশ্ন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো বা এ ধরনের কার্যক্রম করলে ‘জিরো টলারেন্স’। এ বিষয়ে কেউকে ছাড় দেব না।
তিনি বলেন, পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলবে। সব বাহিনীও তৎপর থাকবে।
পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন বিষয় তদারকি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওই কমিটিতে রাখা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফেইসবুকে প্রশ্ন ফাঁসের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, “অভিভাবক, দায়িত্বশীল শিক্ষক, শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন- শিক্ষার্থীদের দয়া করে বলবেন, বিভ্রান্ত হয়ে তাদের প্রস্তুতি ও ভালো করার চেষ্টা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।”
নাহিদের ভাষায়, পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র নিয়ে ‘একটি আবহ সৃষ্টি করা হয়’, যাতে ছেলেমেয়েরা ‘প্রশ্নপত্রের পেছনে ছোটে’।
“শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান, তারা যেন ভুয়া প্রশ্নপত্রের পেছনে না ছোটে। প্রশ্ন আউট হয়েছে শুনেও তারা যেন তা অগ্রাহ্য করে। ফাঁসের নামে ভুয়া প্রশ্নপত্রের পেছনে ছুটবেন না। প্রশ্ন ফাঁসের খবর পেলে আমাদের জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।”
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কোচিং সেন্টারগুলোর ওপর নজরদারি আরো বাড়ানো হবে জানালেও পরীক্ষা চলাকালে কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।