শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে নীতিমালা

সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ প্রণয়ন করেছে সরকার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2012, 08:43 AM
Updated : 20 June 2012, 08:43 AM
ঢাকা, জুন ২০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ প্রণয়ন করেছে সরকার।
বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারিকৃত নীতিমালায় বলা হয়, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল, নাম ও শ্রেণী উল্লেখ করে জানাতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
“এক্ষেত্রে মহনগরী এলাকার প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে তিনশ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুইশ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড়শ টাকা নেওয়া যাবে।”
তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান ইচ্ছা করলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এই অতিরিক্ত কোচিংয়ের টাকা কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত ক্লাসের ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে, প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে।
অতিরিক্ত ক্লাস থেকে আয়ের টাকার ১০ শতাংশ বিদ্যালয়ের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সহায়তা কর্মচারীদের ব্যয় বাবদ রাখা হবে। বাকি টাকা শিক্ষকরা পাবেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ এই অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে।
“কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনো কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারবেন না বা নিজে কোনো কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারবেন না বা কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কোচিং-এ উৎসাহিত, উদ্ভুদ্ধ বা বাধ্য করতে পারবেন না।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্যদ কোচিং বাণিজ্যরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
তদারকি
কোচিং বাণিজ্য বন্ধে তদারকি করতে মেট্রোপলিটন ও বিভাগীয় এলাকার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে নয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে।
এছাড়া জেলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে আট সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।
শাস্তি
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতনভাতা স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থহিত, বেতন একধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওবিহীন কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও একই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমপিওবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের বিরুদ্ধেও একই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়, কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্যদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সরকার পরিচালনা পর্যদ ভেঙে দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি ও অধিভুক্তি বাতিল করতে পারবে।
সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারি বিধিমালার অধীনে অসদাচারণ হিসাবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রেক্ষাপট
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন; যা পরিবারের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং এ ব্যয় মেটাতে অভিভাবকরা হিমশিম খাচ্ছেন।
এছাড়া অনেক শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পড়ানোতে মনযোগী না হয়ে কোচিং-এ বেশি সময় ব্যয় করছেন। এক্ষেত্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি ও হাই কোট বিভাগের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসআই/এমআই/২০৩৭ ঘ.