গবেষণা ও উদ্ভাবনের পরিবেশ করতে হবে সরকারকে: খলীকুজ্জমান

বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সরকারকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2022, 12:18 PM
Updated : 1 July 2022, 12:18 PM

তিনি বলেছেন, “একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত নীতি, অর্থায়ন ও গবেষক-উদ্ভাবকদের কাজের স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা জরুরি।

“অপরদিকে শিল্পগুলোকেও গবেষণা ও গবেষকদের উদ্ভাবন কার্যক্রমে নিজেদের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে যুক্ত হওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১১টায় টিএসসির মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এ বছর ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন: ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা’ প্রতিপাদ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খলীকুজ্জমান বলেন, গবেষণা ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে একাডেমিয়া, শিল্প ও সরকারের একযোগে কাজ করার পদ্ধতিকে ‘ট্রিপল হেলিক্স মডেল’ বলা হয়। আর গবেষণাভিত্তিক উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় এই তিন পক্ষের সঙ্গে নাগরিক সমাজ যুক্ত হলে সেই পদ্ধতি ‘কোয়াড্রাপল হেলিক্স মডেল’ নামে পরিচিত।

“বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন অঙ্গনে খুবই উদ্যোগী এবং সোচ্চার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতামত সৃষ্টিতে নাগরিক সমাজ বিশেষ ভূমিকা রাখে।

“একাডেমিয়া, শিল্প ও সরকারকে গবেষণা ও নতুন দ্রব্যাদি ও প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি উদ্ভাবনে ট্রিপল হেলিক্সের অংশীদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে আরও উদ্যোগী হতে উদ্বুদ্ধ করা এবং অবস্থা বিবেচনায় চাপ সৃষ্টি করতে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতার বলয় তৈরি করতে খলীকুজ্জমান বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে তা অনুসরণের পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতায় যেহেতু বাংলাদেশে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাই এ দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও মালয়েশিয়ার মতো সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। ওই সকল দেশে গৃহীত ব্যবস্থার আলোকে বাংলাদেশের বাস্তবতাভিত্তিক যথাযথ নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করতে পারে সরকার।”

ঔপনিবেশিক আমলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় ঘটনার আবর্তে ১৯২১ সালের ১ জুলাই রমনার সবুজ প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ববঙ্গের প্রথম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে সূতিকাগারের মতো ভূমিকা রাখলেও দীর্ঘদিন থেকে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শতবর্ষী এ বিদ্যাপীঠের।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোতে পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এবং কেক কাটার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অ্যালামনাইদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

পরে টিএসসিতে আলোচনা সভায় উপাচার্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিভিন্ন উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে সরকার, একাডেমিয়া, ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যালামনাইদের একযোগে কাজ করতে হবে। সেসব দেশের অনেক খ্যাতিমান অধ্যাপক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।

“ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক জ্ঞান বৃদ্ধি ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) উপস্থিত ছিলেন।