করোনাভাইরাস মহামারীতে আড়ম্বরহীন দুটি বৈশাখ পার করে এবার প্রকৃতিকে মূল ভাবনায় রেখে বর্ষবরণের আয়োজন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে যাওয়ার পথে দেখা যায়, গলির দেয়ালে শিক্ষার্থীরা রঙ তুলির আঁচড়ে তৈরি করছেন পটচিত্র। বৈশাখ উপলক্ষে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গাজীর পটের আদলে চারুকলা বিভাগের নিজস্ব উদ্যোগে প্রথমবারের মত আঁকা হচ্ছে দেয়ালচিত্র।
এ সম্পর্কে চারুকলা বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী রক্তিম সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবছরই করতে চাইতাম। যেহেতু আমাদের লোকবল কম ছিল, তাছাড়া বাজেটের একটা ব্যাপার আছে; সেকারণে করা হয়নি। এখন অনেকগুলো ব্যাচ হয়েছে তাদের নিয়ে করছি।
এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক গেইট হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর ফটকের দেয়ালে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে করা হচ্ছে রিকশা পেইন্টিং।
বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী আকিব আকরাম ষড়জ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকল শ্রেণির মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সমন্বয়ের জন্যই এ ধরনের উদ্যোগ।
“সবাই যাতে নিজেদের রিলেট করতে পারে। রিকশার পেছনে যে নীতিবাক্যগুলো লেখা থাকে- মায়ের দোয়া, আপনার সন্তানকে স্কুলে দিন; সেগুলোও রাখতেছি পেইন্টিংয়ে।”
পহেলা বৈশাখ সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইমদাদুল হকের নেতৃত্বে শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। রোজার কারণে এবার সংক্ষিপ্ত হচ্ছে শোভাযাত্রার গতিপথ।
প্রকৃতিকে মূল থিম করে সেখানে তুলে ধরা হবে পাখির প্রতিকৃতি। স্থান পাবে বড় আকারের ফুল, মৌমাছি, পাতা, বাঘ ও পেঁচার মুখোশ। সে উপলক্ষে চারুকলা বিভাগে সপ্তাহ খানেক ধরে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ।
গত দুই বছর ঘরে থেকে বৈশাখের আয়োজন করা হয়েছিল ভার্চুয়ালি। ফলে এসব কাজ থেকে বাধ্য হয়েই দূরে থাকতে হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
এবার বাংলা বর্ষবরণের আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হয়ে প্রায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আসফিকুর রহমান।
“গত দুইবছর কাজ করতে পারিনি, তখন কাজগুলো করতে না পারার জন্য খারাপ লাগত। আমরা মূলত এই দিনগুলোর জন্যই অপেক্ষা করে থাকি। রোজা রেখেও কাজ করছি, ভালোই লাগতেছে।”
বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসান আলী বলেন, “মৌমাছিগুলোর ওপরে কালার করে ডিজাইন করা হবে। প্রকৃতিকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্যই এগুলা বানানো হচ্ছে। এছাড়াও গাছের পাতা তৈরি করা হবে। যেহেতু প্রকৃতির একটা বড় অংশ জুড়ে গাছ রয়েছে।”
চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ বলেন, “কেন্দ্রীয়ভাবে থিমটা নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অনেকদিন আমরা বের হতে পারিনি, প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে পারিনি। প্রকৃতি অসুস্থ ছিল দীর্ঘদিন।
“এবার তাই বৈশাখের মাধ্যমে প্রকৃতিকে উদযাপন করতে চাইছি আমরা। বাইরে বের হলেই যেহেতু প্রকৃতিতে ফুল, ফল, পাখি দেখা যায়। সেকারণে এসবকে সাবজেক্ট হিসেবে তুলে ধরছি।”
তবে এই কাজের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাজেট একটু বেশি হলে বিভাগ থেকে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা যেত।
পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও দিনব্যাপী নানা আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব মঞ্চে চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে সংগীত বিভাগের আয়োজনে নৃত্য ও দলীয় সংগীত এবং লোকসংগীত পরিবেশন করা হবে।
থাকবে ‘মনের মানুষ’ এবং ‘ট্রাভেলার্স’ ব্যান্ড দলের সংগীত পরিবেশনা। তাছাড়া দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় প্রকাশনা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।