ঢাবির হলে ৫ মাসে নির্যাতনের শিকার ১৮ শিক্ষার্থী: সমীক্ষা

মহামারীতে দীর্ঘ বন্ধ পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পাঁচ মাসে হলগুলোতে ১৮ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2022, 12:43 PM
Updated : 28 Feb 2022, 12:43 PM

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার (এসএটি)’ সোমবার সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই এসব নির্যাতনে জড়িত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরেন এসএটি’র প্রতিষ্ঠাতা সালেহ উদ্দিন সিফাত।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমলে গত ৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়। তখন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ছিল ‘গেস্টরুম নির্যাতন’ হবে না।

“কিন্তু এসএটি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, ৫ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ৬টি হলে ১০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যাতে ভুক্তভোগী হয়েছেন ১৮ জন শিক্ষার্থী।”

এর তিনটি ঘটনায় প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাও ‘নাম মাত্র’ বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে এসএটি।

এছাড়া গত এক বছরে তিনজন ক্যাম্পাস-সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের সময় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে স্যার এ এফ রহমান হলে। সেখানে ৮ শিক্ষার্থী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন, কিন্তু হল প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

‘ম্যানার’ (আচরণ) শেখানোর নামে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৩ শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কমসূচিতে না যাওয়ায় মাস্টারদা সূর্য সেন হলে ২ শিক্ষার্থী, ফেইসবুক পোস্টের কারণে বিজয় একাত্তর হলে ২ শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হলেও এসব ক্ষেত্রেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে এসএটি জানায়।

তবে সম্প্রীতি বিজয় একাত্তর হলে আরেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় ৩ শিক্ষার্থীকে ৬ মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার এবং মাস্টারদা সূর্য সেন হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় একজনকে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়া জগন্নাথ হলে এক শিক্ষার্থী এবং রোকেয়া হলে এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

সিফাত জানান, এখন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে ষান্মাসিক ও বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে তারা্।

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই প্রতিবেদন তুলে ধরছি, যাতে প্রত্যেকটি নির্যাতনের ঘটনা তদন্তপূর্বক নির্যাতকদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রাশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

“এই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি প্রশাসনিক বিধি এবং আইন তৈরি করারও প্রস্তাব রাখছি।”

এই ধরনের নির্যাতন না থামলে আদালতে যাওয়ার ঘোষণাও দেন সিফাত।

সংবাদ সম্মেলনে এসএটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্মৃতি আফরোজ সুমি, আহনাফ সায়েদ খান, আনাস বিন মনির, সাদ আরমান নাফিস উপস্থিত ছিলেন।